বুমার বনাম জেন–জি: অফিসে কর্মীর মানসিকতায় যে পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে

প্রথম আলো প্রতীক বর্ধন প্রকাশিত: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:৪৭

পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে মানুষের মানসিকতায়। একসময় বেবি বুমার (জন্ম: ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪) প্রজন্মের মানুষেরা মনে করতেন, অফিসে বেশি সময় কাজ করা ও বাড়তি টাকা উপার্জন করা মর্যাদার প্রতীক; কিন্তু সেই দিন আর নেই। পশ্চিমা দেশে এই প্রবণতা আগেই শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বিমা কোম্পানি মেটলাইফের এক জরিপেও দেখা গেল, দেশের মানুষের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।


জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের কর্মীদের বড় অংশ (৭৮ শতাংশ) বর্তমানে নিজেদের চাকরিতে সন্তুষ্ট; কিন্তু তারপরও বড় একটি ফাঁক রয়ে গেছে। সেটি হলো চাকরিতে সন্তুষ্ট হলেও নিয়োগদাতাকে অনুমোদন বা সুপারিশ করার বেলায় তারা পিছপা হচ্ছেন। মাত্র ৪২ শতাংশ কর্মী সক্রিয়ভাবে তাঁদের নিয়োগকর্তার বিষয়ে সুপারিশ করবেন। অর্থাৎ আনুগত্যের ক্ষেত্রে বড় ফাঁক আছে। বোঝা যায়, কোম্পানির বিদ্যমান সুবিধা ও আধুনিক কর্মিসমাজের পরিবর্তনশীল প্রত্যাশার মধ্যে বড় অসংগতি আছে।


এই বৈপরীত্য থেকে বোঝা যায়, সন্তুষ্টি কেবল মৌলিক শর্ত মাত্র। আরও গভীরভাবে সামগ্রিক চাহিদা পূরণ হলেই কেবল কর্মীরা কোম্পানির বিষয়ে সুপারিশ করে থাকে।


জরিপে তৈরি পোশাক, ব্যাংকিং, এফএমসিজি, টেলিযোগাযোগ, এনজিওসহ বিভিন্ন খাত থেকে ৫৭১ জন কর্মী এবং ১৪২টি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের মতামত নেওয়া হয়েছে। কর্মীদের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন তাদের কর্মীদের জন্য আর্থিক ও অনার্থিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আরও ভালোভাবে সাজাতে পারে, সেই লক্ষ্যেই দেশে এই প্রথম এমন গবেষণা করা হয়েছে।


মেটলাইফ ২০২৫ এমপ্লয়ি বেনিফিট ট্রান্ড স্টাডির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই ব্যবধান বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের কর্মীরা প্রকৃতপক্ষে কী আশা করেন—যেমন যত্ন, সুস্থতা, সুবিধা ও যোগাযোগ, তার সুস্পষ্ট ও প্রমাণভিত্তিক ধারণা পাওয়া যায় এই জরিপে। তাঁদের এই প্রত্যাশা বুঝতে পারলে প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল কর্মীদের সন্তুষ্ট করতে পারবে তা নয়; বরং কর্মীদের কোম্পানির প্রতি আরও নিবেদিতপ্রাণ করে তুলতে পারে।


নিছক ভালো বেতন দেওয়ার মধ্য দিয়ে এখনকার কোনো কোম্পানি দায়িত্ব সারতে পারে না, যদিও বেশির ভাগ কোম্পানি ভালো বেতনও দেয় না। তার সঙ্গে আরও যেসব ঘাটতি আছে, তাতে কর্মীদের সঙ্গে কোম্পানির দূরত্ব কেবল বেড়েই যায়।


জরিপে দেখা যাচ্ছে, কর্মীর প্রতি কোম্পানির নজর রাখা এখন আর নিছক বাড়তি বিষয় নয়; বরং ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে তা বড় চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।


তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কর্মীরা যখন মনে করছেন, কোম্পানি তাঁদের খেয়াল রাখছে, তখন কর্মীদের মধ্যে সন্তুষ্টি আসছে। তখন তাঁরা কোম্পানির জন্য বড়গলায় কথা বলেন বা তখন তাঁদের সামগ্রিক কল্যাণে প্রভাব পড়ে। যেসব কোম্পানি প্রতিভা ধরে রাখতে চায় বা কর্মীদের কর্মনৈপুণ্য বৃদ্ধি করতে চায়, তাদের পক্ষে কর্মীদের খেয়াল রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। যে কর্মীরা মনে করেন, কোম্পানি তাদের খেয়াল রাখছে এবং যাঁরা মনে করেন, তাঁদের কোম্পানি সেটি করছে না—এই দুই কোম্পানির কর্মীদের মধ্যে পার্থক্য চোখে পড়ার মতো। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচকেও বড় পার্থক্য দেখা যায়।


দেখা গেছে, যাঁরা কোম্পানির যত্ন–আত্তিতে খুশি, তাঁদের মধ্যে ৫০ ভাগ কোম্পানির পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়। যাঁরা সন্তুষ্ট নয়, তাঁদের মধ্যে মাত্র আট ভাগ তা করেন। সন্তুষ্টি সূচকেও বড় ব্যবধান দেখা যায়, ৮৭ শতাংশ বনাম ৪৫ শতাংশ। কল্যাণের ক্ষেত্রে ৫৮ ভাগ বনাম ২২ ভাগ। কর্মীদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবধান দেখা যায় না। বাস্তবতা হচ্ছে, চরম অসন্তুষ্ট কর্মীরাও কাজের সঙ্গে একাত্ম থাকেন; কিন্তু তাঁরা কোম্পানির পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন না। মেটলাইফের জরিপে দেখা গেছে, কোম্পানির স্বাস্থ্যের জন্য এটি বড় ঝুঁকি।


বাংলাদেশের বেসরকারি খাত গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়, চাকরির কঠিন প্রতিযোগিতা ও মানসিক চাপ কর্মীদের জীবনে প্রভাব ফেলছে। এমন সময়ে কর্মীরা শুধু বেতন নয়, তাদের সার্বিক ভালো থাকার নিশ্চয়তাও চান।


জরিপের শানে নজুল হলো কর্মীদের কাছে কোম্পানির পক্ষ থেকে এই খেয়াল রাখার বিষয়টি বিমূর্ত বিষয় নয়; বরং জীবনের বিশেষ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কখন কোম্পানির কাছ থেকে সহায়তা চান, এমন প্রশ্নের জবাবে ৪৩ শতাংশ কর্মীর উত্তর হলো, বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সময় আর্থিক সহায়তা। আরও যে চারটি ক্ষেত্রকে তাঁরা বেছে নিয়েছেন, সেগুলো হলো ১. কর্মী যখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হয়ে যান তখন; ২. মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি যেমন অবসাদ ও উদ্বেগের সময়; ৩. যখন পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যের যত্নআত্তির প্রয়োজন হয়; ৪. গুরুতর শারীরিক রোগের সময়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও