রাজনীতিতে গরম হাওয়া : উত্তরণে ঐক্য জরুরি

যুগান্তর ড. মাহফুজ পারভেজ প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৭

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে গঠন করা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩১ অক্টোবর; যে কমিশন চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয়েছিল। ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ সরকারের হাতে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসে কমিশনের কার্যালয়ের একাংশ সংসদ সচিবালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী রোববার বাকি অংশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।


জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ ও মেয়াদ শেষ হলেও দেশে রাজনৈতিক ঐক্যের পরিসর বাড়েনি। বরং চলমান রাজনীতিতে ঐকমত্যের আলামত খুব কমই দেখা যাচ্ছে। বদলে রাজনীতিতে বইছে গরম হাওয়া। অসহিষ্ণুতা, অনৈক্য ও বিভেদের আলামত দেখা যাচ্ছে। এতে ঐক্যের পাশাপাশি নির্বাচন, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার আশঙ্কাও করছেন অনেকেই, যা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অতিদ্রুত দূর করা দরকার। নইলে আশার জায়গা দখল করতে পারে হতাশা। পুরো পরিস্থিতি চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।


পরিস্থিতির পর্যালোচনায় এমন আশঙ্কাও কেউ কেউ করছেন, দেশ নয়া সংকটে আবর্তিত হচ্ছে আর এ সংকট ঘনীভূত হয়েছে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের সুপারিশ ঘিরে। জুলাই সনদে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সই করেছে। তবে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তাতে বিএনপিসহ অনেক দল ক্ষুব্ধ। কমিশনের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গ, প্রতারণা ও এখতিয়ারবহির্ভূত পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ করেছে এসব দল।


বস্তুতপক্ষে, কমিশনের সুপারিশ প্রকাশের পর রাজনীতির পুরোনো বিভক্তি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। কারণ বিএনপি সুপারিশের সংশোধনী দাবি করলেও জামায়াতে ইসলামী দ্রুত সনদ বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে। এনসিপি এখনো সনদে সই না করলেও তারা সরকারের পদক্ষেপে খুশি। এমন অবস্থায় জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে নতুন বিভক্তি ও দূরত্বের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এমন আশঙ্কার কারণ হলো, দলগুলো নিজের দাবি ও অবস্থান ধরে রাখতে গিয়ে অন্য দলের সম্পর্কে কঠোর ও তীব্র সমালোচনা করছে। দলগুলোর পারস্পরিক সমালোচনার ভাষা ও শব্দগুলো রাজনীতিতে উত্তেজনার সঞ্চার করেছে।


উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, তাতে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতাকর্মী-সমর্থকরা অংশ নিয়েছেন। আন্দোলকারী সব মানুষের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছিল। বহু বছরের ক্ষোভ, অত্যাচার, শোষণের কারণে মানুষ ভয়ংকর রকম ক্ষুব্ধ ছিল; যার ফলে সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনাকে তাড়িয়েছে। এ তাড়ানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের একটা স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল। সে স্বপ্ন দেওয়ালে দেওয়ালে ছড়িয়ে আছে।


কিন্তু আন্দোলনের এক বছরের অভিজ্ঞতায়, বিশেষত, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের সুপারিশ নিয়ে যদি রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য, বিভক্তি, দূরত্ব ও উত্তেজনা তৈরি হয়, তাহলে কার লাভ হবে? আহত, পঙ্গু, শহীদের স্বপ্নগুলো এতে যে মোটেও লাভবান হবে না, সে কথা বলাই বাহুল্য। বরং সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে সাধারণ মানুষ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। মানুষ ফ্যাসিবাদ থেকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রত্যাশায় একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও সর্বজন গ্রহণীয় নির্বাচনের জন্য অপেক্ষমাণ। জনমতের ভিত্তিতে একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলে পরিস্থিতি বদলাবে এমনটা আশা করছে আমজনতা। অন্তর্বর্তী সরকারও আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য স্থির করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। সেই অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্ক ও মতপার্থক্য পরিস্থিতিকে জটিল, ঘোলাটে ও উত্তপ্ত করেছে এবং নির্বাচন নিয়ে একটি অনিশ্চয়তার আবহ তৈরি করেছে।


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকার এখন প্রতারকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। গণসংহতি আন্দোলন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। অন্যদিকে, জুলাই সনদ কার্যকর করতে আজ-কালের মধ্যেই আদেশ জারির দাবি জানিয়েছে জামায়াত। এনসিপি আদেশ জারির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও