ক্ষমা চাইলেন না শেখ হাসিনা—চাইলেই কি যথেষ্ট হয়ে যেত?

বিডি নিউজ ২৪ মাহবুবুল হক ভূঁইয়া প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:০৯

গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্টকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। গত বছরের পাঁচ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি এই প্রথম কোনো মূলধারার সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন। ফলে এই নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর তার বিভিন্ন বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়া বা ফাঁস হয়ে যাওয়া ফোনকলের মাধ্যমে শোনা গিয়েছে, যা বেশিরভাগই অনানুষ্ঠানিক এবং আক্রমণাত্মক ছিল। তবে এবারের সাক্ষাৎকারটিকে আনুষ্ঠানিক, গোছানো, পরিকল্পিত বলা যেতে পারে। বোধ করি মূলধারার গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বলে পরিশীলিত থাকবার চেষ্টা করেছেন। এই সাক্ষাৎকার থেকে গতবছরের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান, তার দেশে ফেরা, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, আগামী নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ নিয়ে পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গিয়েছে।


সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেইসবুক, ইউটিউবে বিশ্লেষকদের নানা পর্যালোচনা এবং টেলিভিশনের টক শোতে তার সাক্ষাৎকার নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। তবে গত বছর গণঅভ্যুত্থানের সময় বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারী নিহত হওয়ায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচন বর্জনের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তবে শেখ হাসিনার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরও তির্যকভাবে ভাবা ও আলাপ করার দাবি রাখে। একইভাবে তার নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানানোর নৈতিক অধিকার রয়েছে কি না, তা নিয়েও রয়েছে ভাববার অবকাশ।


“কী হবে বা সে হৃদয়ে যেখানে কোথাও নেই এতটুকু টলটলে ক্ষমা।” ক্ষমার প্রসঙ্গ আসতেই শঙ্খ ঘোষের ক্ষমা কবিতার এই শেষ লাইনটির কথা মনে পড়ল। কবিতার শেষ এই লাইনটি এখানে ঠিক সেভাবে প্রাসঙ্গিক নয়, যে উদ্দেশ্যে তিনি কবিতাটি লিখেছেন। কবি মূলত প্রেমিকার ক্ষমাহীন হৃদয়ের মূল্য নিয়ে আক্ষেপ করেছেন। রসিকেরা শেখ হাসিনার ক্ষমাহীন হৃদয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বা আক্ষেপ করতে পারেন। কিন্তু আদতে শেখ হাসিনার ক্ষমা চাওয়া বা না চাওয়ার বিষয়টি কি খুব গুরুত্বপূর্ণ? “দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হবেন না কি না?”—এ প্রশ্নটিই বরং শেখ হাসিনাকে করা যৌক্তিক হত। অথবা তাকে কীভাবে বিচারের মুখোমুখি করা যায়, আমাদের আসলে ওই বিষয়েই আলোচনায় ব্যস্ত হওয়া উচিত।


গত কয়েকদিন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে শেখ হাসিনা ‘ক্ষমা চাইবেন কি না’—এই ইস্যুটি আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। প্রশ্ন হল, শুধু গত বছরের আন্দোলনই নয়, শেখ হাসিনার ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনকালে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ওপর যে নিপীড়ন ঘটেছে, শুধু ক্ষমা চাইলেই কি ওইসব অপরাধের দায়মুক্তি মিলবে? বস্তুত শুধু ক্ষমা চাইলেই তাকে দায়মুক্তি দেওয়া যায় না। ক্ষমা চাওয়ায় অপরাধ মোচন হয় না। এ বছরের শুরুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক সরকার, নিরাপত্তা-গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ ও আওয়ামী লীগ পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসমূহের সঙ্গে জড়িত ছিল। পরবর্তীকালে ফাঁস হওয়া বিভিন্ন ফোন কলে শেখ হাসিনাকে ওইসব হত্যাকাণ্ডের সরাসরি নির্দেশ দিতেও শোনা যায়। ফলে বিচারের মাধ্যমে যথাযথ শাস্তিই তার একমাত্র যৌক্তিক পরিণতি হতে পারে।


তার ক্ষমা না চাওয়ার বিষয়টিকে আরও দু-ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এক, একটু পেছন ফিরে তাকালেই শেখ হাসিনার গত শাসনামলের বক্তব্য ও সাক্ষাৎকারে তার অহঙ্কারী, আক্রমণাত্মক চেহারার দেখা মিলবে। এখনো হয়তো তার ওই বৈশিষ্ট্যই অব্যাহত রয়েছে। আমরা হয়তো তার এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ওই রূপই দেখতে পেলাম। দুই, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ক্ষমা চাওয়াকে দুর্বলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলীয় প্রধানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি তাকে কর্মী ও ভোটারদের কাছে ছোট করতে পারে এমন বিশ্বাসও আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে রয়েছে। ওই বিবেচনার জায়গা থেকেও হয়তো তিনি ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে কৌশলী উত্তর দিয়েছেন।


রাজনীতিবিদদের ক্ষমা চাওয়ার দৃষ্টান্ত একেবারেই যে নেই, তাও কিন্তু নয়। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, যিনি খুব শক্ত হাতে দেশ চালিয়েছিলেন, তিনিও ভুল করার পর ক্ষমা চাওয়ার মতো বিনয়ী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, সংবাদপত্র সেন্সর করা হয় এবং হাজার হাজার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সমালোচককে জেলে ভরা হয়। পরবর্তীকালে তিনি জরুরি অবস্থার সময় হওয়া ভুল ও বাড়াবাড়ির জন্য ‘সম্পূর্ণ দায়ভার’ নিজের কাঁধে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন। তার এই ভুল স্বীকার করার মানসিকতা তার হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছিল, যার ফলস্বরূপ কিছুদিন বিরোধীদলে থাকার পর ভোটাররা তাকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনে। এই ধরনের ক্ষমা চাওয়া কখনও কখনও প্রকৃত ন্যায়বিচার ও পুনর্বাসনের বিকল্প হতে পারে না। ইন্দিরাকে এখনও নিয়মিত সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করান ভারতীয় লেখকরা। শেখ হাসিনা যে মাপের অপরাধ করেছেন তাতে শুধু ক্ষমা চাইলেই তার দায়মুক্তি ঘটবে না, তা মোটামুটি নিশ্চিত। তবু তিনি মুখের কথায় ক্ষমা চাওয়ার মতো ঔদার্য্য দেখাতে পারলেন না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও