ক্ষুদ্রঋণ ও ডিজিটাল ব্যাংকিং

যুগান্তর তারিক সাইদ হারুন প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৬

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবন ক্রমেই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষে আমাদের দেশেও চালু হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। টাকা তুলতে এবং জমা দিতে গ্রাহককে এখন আর ব্যাংকে না গেলেও চলে। মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে শাখাবিহীন এমন একটা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সহজে ও দ্রুত ব্যাংকিং সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ উত্তোলন ও জমাদান, বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা যেমন-বেতন প্রদান, বিল পরিশোধ, প্রবাসী আয় প্রেরণ ও গ্রহণ, সরকারি বিভিন্ন ভাতা প্রদানসহ নানাবিধ কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায় অনায়াসে। দেশব্যাপী যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে এ সেবার নিশ্চয়তা রয়েছে। গ্রাহকের কাছে কেবল একটা ফোন আর ক্ষেত্রবিশেষে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে গ্রাহকের মোবাইল নাম্বারটিই তার মোবাইল অ্যাকাউন্ট নাম্বার।


দেশে মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস সেবায় যুক্ত আছেন প্রায় ১৪ কোটি ৫৮ লাখ গ্রাহক। এমএফএসয়ে মাসিক গড় লেনদেন প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমএফএস লেনদেন বিষয়ক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট লেনদেনের ৮৫ শতাংশই এখনো কেবল অর্থ স্থানান্তর তথা ক্যাশইন, ক্যাশআউট ও ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। মার্চেন্ট পেমেন্ট বা কেনাকাটায় বিল পরিশোধ হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ। দেশব্যাপী নগদবিহীন লেনদেনের অবকাঠামো গড়ে না ওঠা, রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার মানসিকতা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত কালো টাকার প্রভাবের কারণেই মার্চেন্ট পেমেন্ট জনপ্রিয় হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। অথচ ক্যাশলেস পেমেন্টে গ্রাহককে অনুপ্রাণিত ও অভ্যস্ত করা গেলে গ্রাহক, মার্চেন্ট, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি হতে পারে। এমএফএসয়ের মাধ্যমে পেমেন্ট বাড়ালে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতেও তা ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোগ নিলে ডিজিটাল পেমেন্টের সম্প্রসারণ সম্ভব। ডিজিটাল পেমেন্ট নগদবিহীন বা ক্যাশলেস অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মানি সার্কুলেশন হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের বাইরেও সাধারণ মানুষের কাছে রয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। দেশের মোট লেনদেনে মাত্র ২৭-২৮ শতাংশ ডিজিটাল মাধ্যমে হচ্ছে, বাকি ৭০-৭২ শতাংশ প্রথাগত পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধ।


বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছে গেছে এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল ব্যাংক অত্যাধুনিক ব্যাংকিং সেবা দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দিতে পারবে। দেশের মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই ডিজিটাল লেনদেনের অভ্যাস তৈরি করেছে। তবে তাদের সেবার ধরন সীমিত। ডিজিটাল ব্যাংক এ সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারবে। যেমন-এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিতে বা ঋণ দিতে পারে না। ক্ষুদ্রঋণদানকারী (এমএফআই) প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তাদের বিশাল এ গ্রাহকগোষ্ঠীকে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সেবা খুব সহজেই প্রদান করা সম্ভব।


ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের কার্যকর-প্রাসঙ্গিক উদ্যোগ এবং অর্থনীতির জন্য মাইলফলক হতে পারে এমন একটা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। দেশে বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণের সদস্য প্রায় ৪ কোটি ১৫ লাখ, যাদের কাছে থাকা মোট আর্থিক স্থিতি প্রায় পোনে দুই লাখ কোটি টাকা। এ সদস্যরা সাপ্তাহিক ও মাসিকভিত্তিতে ঋণগ্রহণ, কিস্তি ও সঞ্চয় জমা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এমএফএস চালু করলেও বড় অংশ এখনো এর বাইরে রয়ে গেছে। ক্ষুদ্রঋণদানকারী (এমএফআই) প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তাদের বিশাল এ গ্রাহকগোষ্ঠীকে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সেবা খুব সহজেই প্রদান করা সম্ভব। এমএফআই ও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মেলবন্ধনের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির বড় অংশকেও নগদবিহীন লেনদেনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী খুব সহজেই এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক বা অর্থনৈতিক স্বাক্ষরতা দিতে পারবে।


বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ব্যাংকিং নিয়মে লেনদেনের খরচ খুব বেশি। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এটিকে কমিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করা যাবে। উদাহরণ হিসাবে কেনিয়ার কথা বলা যায়, সেখানে ক্ষুদ্রঋণ লেনদেনের ৮৫ শতাংশই এমএফএসয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যথাযথ নীতি সহায়তা পাওয়া গেলে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোও এক্ষেত্রে খুব ভালো করতে পারবে, বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ সক্ষমতা আছে। এটা করা গেলে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে, নতুন টাকা ছাপানোর ব্যয়ও কমবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও