পুরস্কার কাউকে দেশসেরা বানায় না: আরশ খান
কমেডি ঘরানার নাটক থেকে সরে এসে এখন রোমান্টিক নাটকে মন দিয়েছেন আরশ খান। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার নিয়েছেন মায়ের হাত থেকে; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন দৃশ্যটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কাজ ও সাম্প্রতিক নানা প্রসঙ্গ ধরে গতকাল তরুণ অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন নাজমুল হক।
কমেডি ঘরানা থেকে সরে এসে আপনাকে রোমান্টিক আর গল্পনির্ভর নাটকে বেশি মনোযোগ দিতে দেখা যাচ্ছে...
আরশ খান : আমার ক্যারিয়ারের শুরুর কাজগুলো যদি দেখেন, গল্পনির্ভর কাজ দিয়েই শুরু করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে যেটা হলো, একদমই নতুন থাকার কারণে তখন আমার সিদ্ধান্ত বলে কিছুই ছিল না। সচ্ছলতার জন্য কাজের ক্ষেত্রে আমার হাতে অপশন থাকত দুটি—হয় আমি সেটা করব বা করব না। কিন্তু এ রকম না করে ওরকম করতে চাই, সিদ্ধান্তের জায়গাটা বা সেই জোরটা ওই মুহূর্তে ছিল না। যে কারণে জীবনের একটা লম্বা সময় আমাকে এমন অনেক কাজ করে যেতে হয়েছে, যে কাজগুলো করার পর পর্দায় নিজেকে দেখে নিজেরই মন খারাপ হয়ে যেত। কারণ, আমি কখনোই নিজেকে ওভাবে দেখতে চাইনি। পরবর্তী সময়ে আমার কিছু দর্শক তৈরি হলো। তত দিনে নিজেও বুঝে যাই কোন ধরনের প্রজেক্ট করলে আমার দর্শক দেখবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ইউটিউবের মন্তব্যের ঘরে দর্শকেরা মন্তব্য করতে লাগলেন, ‘আরও নাটক চাই, আপনাকে দেখতে চাই’—তখন আমি বুঝলাম যে ঠিক আছে, এখন হয়তো আমার আইডিয়া শেয়ারিংয়ের জায়গাটা তৈরি হয়েছে। বড় ভাইদের সঙ্গে বসে তাঁদের অনুরোধ করলাম, বুঝিয়ে বললাম আমি আসলে এ ধরনের কাজ করতে চাই। আমিও খুবই ভাগ্যবান, তাঁরাও সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা যদি এটা না করতেন, একা এই পরিবর্তনটা হতো না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি কি অভিনেতাদের সৃজনশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করবে বলে মনে করেন?
আরশ খান : আমার হিসেবে তো এআই একটা সময় মানবজাতির জন্য ভয়ংকর হবে। কারণ, এটা মূলত মানুষের কাজ কেড়ে নিচ্ছে। আগে যে কাজ এক হাজার মানুষ মিলে দীর্ঘ সময় ধরে করতেন, এখন একা একজন এআই ব্যবহার করে কয়েক মিনিটেই সেটা করে ফেলছেন। এতে কাজের গতি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হারিয়ে যাচ্ছে—এটা কেউ ভাবছে না। যদি কোনো প্রজেক্টে মিউজিকটা এআই দিয়ে করি, তাহলে এত বছর ধরে যে সংগীতশিল্পীর সঙ্গে কাজ করতাম, তিনি কী করবেন? তাঁর যোগ্যতা তো কমে যায়নি। অনেকেই বলেন, এআই কাজ দ্রুত ও সাশ্রয়ী করে; কিন্তু কাল যদি সেই এআই-ই আমাকে রিপ্লেস (সরিয়ে দেয়) করে, আমরা কি সেটা মেনে নেব? যদি পৃথিবীতে সবাইকে নিখুঁত পুতুলের মতো বানানো যায়, দেখতে হয়তো সুন্দর লাগবে, কিন্তু তা মানুষ থাকবে না। তবে শেষ পর্যন্ত আমি প্রযুক্তির পক্ষে। সে আমার হিসেবে এআই আমাদের সহায়ক হতে পারে, বিকল্প নয়।
সম্প্রতি কালচারাল জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) অ্যাওয়ার্ডে সমালোচক ক্যাটাগরিতে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন। মায়ের হাত থেকে পুরস্কার নিলেন, আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছিল...
আরশ খান : এই ছোট ক্যারিয়ারেই অনেক ধাক্কা খেয়েছি। হয়তো আমারই কোনো কমতি ছিল, তাই প্রত্যাশিত গ্রহণযোগ্যতা পাইনি। তবে ধীরে ধীরে এখন কিছুটা পাচ্ছি। কোনো কাজের স্বীকৃতি পাওয়া সত্যিই ভালো লাগে। বিশেষ করে যখন দেখলাম, মা আমার পাশে আছেন—ওটা এক অন্য রকম অনুভূতি। পরিবারের সামনে কেউ আপনার প্রশংসা করলে, মনে হয় জীবনটা ঠিক পথে এগোচ্ছে। পুরস্কার গ্রহণের মুহূর্তে মায়ের উপস্থিতি অনেক আপ্লুত করেছে, সেই অনুভূতি ভাষায় বোঝানো যায় না। আমার সুখ-দুঃখের সাক্ষী তিনিই। কারণ, আমরা একসঙ্গেই থাকি। আমার যে রকম হাসিটা মা দেখেন, আমার কষ্টটাও মা অনুভব করেন। এ জন্য ওই দিন কেঁদে দিয়েছিলেন। আমি জানি, একটা অ্যাওয়ার্ড ভাগ্য বদলায় না, কাউকে দেশের সেরা বানায় না। যাঁদের সঙ্গে মনোনয়ন ছিল, তাঁরা সবাই যোগ্য, অনেকেই আমার চেয়ে বেশি। ওই দিনটা হয়তোবা আমার ছিল, এ জন্য অ্যাওয়ার্ডটা আমি পেয়েছি। কিন্তু এরপরও স্বীকৃতি, এই সম্মান—এটা ভালো লাগে।
- ট্যাগ:
- বিনোদন
- অ্যাওয়ার্ড
- নাটকে অভিনয়
- আরশ খান