সি চিন পিংয়ের কাছে লড়াইয়ে পরিষ্কারভাবে হেরে যাচ্ছেন ট্রাম্প
গত সপ্তাহে মিসরের শার্ম আল-শেখ শহরে ক্যামেরার সামনে বসে নিজের সাফল্যের বড়াই করছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নিজেকে গাজার ত্রাণকর্তা হিসেবে জাহির করতে চাইছিলেন। তাঁর পাশে ছিলেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল–সিসির মতো আরও কয়েকজন স্বৈরশাসক। এই স্বৈরশাসকেরাই ট্রাম্পকে ইসরায়েল-হামাসের নাটকীয় যুদ্ধবিরতির মঞ্চ সাজাতে সাহায্য করেছেন।
কিন্তু এ মাসের শেষ দিকে অসীম ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সহজে বশ না মানার পাত্র চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। একুশ শতকে প্রভাব বিস্তারের দৌড়ে সি অনেকটাই এগিয়ে, আর সেটা সম্ভব হচ্ছে প্রতি পদে ট্রাম্পের ভুলের কারণে।
সম্প্রসারণবাদী চীনের কমিউনিস্ট সরকারের চরিত্র ও উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক চলছে দেখে অবাক হতে হয়। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা; হংকং, জিনজিয়াং ও তিব্বতে মানুষের মৌলিক অধিকার দমন; প্রতিবেশী দেশগুলোকে যুদ্ধের হুমকি দেওয়া আর দুনিয়াজুড়ে সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি চালানো— চীন সম্পর্কে এমন একটা উপসংহারে পৌঁছনো যায়।
সম্প্রতি চীন বিরল খনিজ ও চুম্বকের ওপর কড়া রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে। এ খাতে চীনের প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির উদ্দেশ্যে এটা খুব ইচ্ছাকৃতভাবে নেওয়া ক্ষতিকর পদক্ষেপ।
বিরল খনিজ এ চুম্বকের মতো উপকরণ মোবাইল ফোন, গাড়িসহ আধুনিক ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরির অপরিহার্য উপাদান। নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এর প্রভাব গুরুতর। বিরল খনিজ ও চুম্বক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, পারমাণবিক সাবমেরিন, ড্রোন এবং অন্যান্য আধুনিক অস্ত্র তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। চীনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এগুলো কোনো সামরিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না। বিভিন্ন দেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ এই ধাতুর বিকল্প উৎস খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আগামী মাসে যদি এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়, তাহলে ইউক্রেনে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
চীন বিদেশি কোম্পানি ও বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপরও একই ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫৯ সাল থেকে একই ধরনের এখতিয়ার দাবি করে আসছে। এখন বেইজিং ওয়াশিংটনের সঙ্গে তার নিজের কৌশলে খেলছে। এর মানে হচ্ছে, রাজনৈতিক স্বার্থে বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
নতুন পদক্ষেপের ঘোষণা শুনে ট্রাম্প প্রথমে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি চীনের ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন এবং সি চিন পিংয়ের সঙ্গে পরিকল্পিত বৈঠক বাতিলের কথাও বলেন। কিন্তু বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে শেষ পর্যন্ত তিনি পিছু হটেন। তবু দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ চলছেই, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
যথারীতি এ ক্ষেত্রেও ট্রাম্পের কোনো পরিকল্পনা নেই। ট্রাম্প নিজেই জানেন না তিনি কী করছেন। সি চিন পিং কিন্তু এমন নেতা নন। তিনি প্রমাণ করছেন যে ট্রাম্প যদি পূর্ণমাত্রার বাণিজ্যযুদ্ধের পথে হাঁটেন, তবু তিনি হোয়াইট হাউসের হামবড়া ভাবের মানুষদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে মোকাবিলা করতে পারেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
- ভূরাজনীতি