জুলাই সনদে স্বাক্ষর, কারখানায় আগুন ও পাসপোর্টের সূচকে অবনতি

প্রথম আলো সোহরাব হাসান প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৫৯

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে উল্লেখ করে দলমত, ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে এর অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানালেও সব দল শুক্রবারের আয়োজনে অংশ নেয়নি। তা ছাড়া এদিন জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দেওয়া এক দল লোকের বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, যা অপ্রত্যাশিত ছিল।


সরকার শুরু থেকে যে তিনটি দলকে বাড়তি মর্যাদা দিয়ে আসছিল, তাদের অন্যতম জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতি ছিল পীড়াদায়ক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক পার্টিই (এনসিপি) জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো জুলাই সনদের দাবি জানিয়েছিল সবার আগে। অথচ তারাই আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদে সই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরবর্তী সময়েও এ সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ রয়েছে। আশা করব এনসিপি সে সুযোগ গ্রহণ করে দেরিতে হলেও নিজেদের রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরিচয় দেবে।


প্রশ্ন হলো, যে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো বিনির্মাণ করার কথা, সেই নির্বাচন সময়মতো এবং সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে কি না? সনদে সই করতে অস্বীকার করা এক বা একাধিক দল যদি নির্বাচন থেকেও দূরে থাকে, তখন সংকট আরও ঘনীভূত হবে।


তবে সনদে স্বাক্ষর করার পর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ঐক্যের সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়েই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাব। সনদে যঁারা স্বাক্ষর করলেন, প্রয়োজন হলে তাঁরা আবারও বসেন। কীভাবে নির্বাচন সুন্দর করা যায়, তা ঠিক করেন।’ তবে সরকারের কাছে প্রশ্ন, ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচনের মাত্র আর কয়েক মাস বাকি, কিন্তু নির্বাচনের সে প্রস্তুতি কোথায়?


২.


জুলাই সনদ সইয়ের আগে কয়েকটি খবর ও ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। রাজধানীর মিরপুরে পোশাক কারখানায় আগুন লেগে আবারও শ্রমিক পুড়ে মরার ঘটনা ঘটেছে। গণ–অভ্যুত্থানের পর একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া ও শ্রমিক বেকার হয়ে যাওয়ার মধ্যে এমন ঘটনা ঘটল। শ্রম খাত নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেল। আমাদের কারখানাগুলো কবে নিরাপদ হবে? অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের জন্য দায়ী কারখানামালিক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কবে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখব আমরা? 


সনদে স্বাক্ষরের আগের দিন এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পেল। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দেশের ৯টি সাধারণ ও কারিগরি এবং মাদ্রাসা বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩। ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮। সেই হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ পয়েন্ট।


গড় পাসের হার ধরলেও ৪১ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। অথচ এইচএসসিতে যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে এসএসসি পাস করেই কলেজে ভর্তি হতে হয়েছে। এইচএসসিতে কেবল পাসের হারই কমেনি, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী সব আনুষ্ঠানিকতার পর পরীক্ষার হলে অনুপস্থিতও থেকেছেন।
পরীক্ষায় পাসের নিম্ন হার নিয়ে আমাদের শিক্ষার অভিভাবকদের মোটেও চিন্তিত বলে মনে হয় না। তাঁরা ঢালাও মন্তব্য করেছেন—আগে উত্তরপত্র উদারভাবে দেখা হতো, এখন সহানুভূতিহীনভাবে দেখায় এই ফল বিপর্যয় ঘটেছে; কিন্তু তাঁরা গত এক বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়) যে নৈরাজ্যকর অবস্থা চলে আসছে, তা স্বীকার করতে চান না। গত এক বছরে এসব কলেজে কত দিন ক্লাস হয়েছে, সেই হিসাব নিলে পরীক্ষায় পাসের হার কমার কারণটি বেরিয়ে আসবে। ১০–১২ বছর পাঠের পর একজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কেবল শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের ক্ষতি নয়, বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় অপচয়ও।


এইচএসসি পরীক্ষার বিপর্যয়কর ফল যখন ঘোষণা করা হলো, তখন এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা আন্দোলনে। তাঁদের ন্যূনতম ন্যায্য দাবিও সরকার পূরণ করে না আর্থিক অসচ্ছলতার দোহাই দিয়ে; কিন্তু উপদেষ্টা–আমলাদের বিদেশ ভ্রমণসহ অনেক অনুৎপাদনশীল খাতে সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সদ্য প্রয়াত শিক্ষাবিদ ও লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষাসংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন কেন এক লাখ টাকা হবে না?’ আমরা যদি শিক্ষার উন্নয়ন চাই, তাহলে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। আর ভালো বেতন ছাড়া তাঁরা শিক্ষকতা পেশায় আসবেন না। এই সত্য সবার আগে বুঝতে হবে।


৩.


আরেকটি খবরও কম উদ্বেগের নয়। বাংলাদেশের পাসপোর্টের বৈশ্বিক মান নিয়ে প্রশ্ন অনেক বছর ধরেই ছিল। আমাদের আশা ছিল,গণ-অভ্যুত্থানের পর গণসম্মতি নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পাসপোর্টের মান বাড়বে; কিন্তু বাংলাদেশি পাসপোর্টের মানের আরও অবনয়ন হয়েছে।


প্রতিবছর বিশ্বের ১৯৯টি দেশের পাসপোর্ট ও ২২৭টি ভ্রমণ গন্তব্য নিয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচক প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স। প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত ২০২৫ সালের সর্বশেষ (৭ অক্টোবর) পাসপোর্ট সূচকে বাংলাদেশি পাসপোর্টের অবনমন ঘটেছে। বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম স্থানে নেমে গেছে। ২০২৪ সালের শুরুতে এ সূচকে বাংলাদেশি পাসপোর্টের অবস্থান ছিল ৯৭তম।


বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে আছে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা উত্তর কোরিয়াও। এর অর্থ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকেরাও এখন বিশ্বের ২২৭টি ভ্রমণ গন্তব্যের মধ্যে মাত্র ৩৮টিতে (গত বছর ছিল ৪২টি দেশ) ভিসামুক্ত সুবিধা পাচ্ছেন। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের সূচকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টের অবস্থান ছিল ১০১তম। এর অর্থ আমরা ২০২৪ সালে যেটুকু এগিয়েছিলাম, বর্তমানে আরও পিছিয়ে পড়েছি। দুই দশক আগে, ২০০৬ সালে হেনলি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬৮তম।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও