
ম্যান্ডেলা বারঘুতির মুক্তি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা
ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে বন্দী বিনিময়ের শর্তে হামাস ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী যেসব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দাবি করেছিল, তাদের মধ্যে একটি নাম ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—মারওয়ান বারঘুতি। হামাসের মতে, তার মুক্তি এই চুক্তির কেন্দ্রীয় বিষয়। কিন্তু বারবারের মতো এবারও ইসরায়েল তার নামটিকে বাদ দিয়েছে। কেন? আর কে এই বারঘুতি?
মারওয়ান বারঘুতি ফিলিস্তিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। বিশ্বব্যাপী তিনি পরিচিত ‘ফিলিস্তিনের নেলসন ম্যান্ডেলা’ হিসেবে। ঠিক ম্যান্ডেলার মতোই বা তার চেয়েও কঠোর—তার জীবনের ইতিহাস। ৬৬ বছরের পূর্ণ জীবন তিনি উৎসর্গ করেছেন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার সংগ্রামে। ২০০২ সাল থেকে তিনি ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী। ২০০৪ সালে ইসরায়েল তাকে ১৪০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। তার হাতকড়া পরা উত্তোলিত হাতের ছবিতে ঢাকা ফিলিস্তিনের দেয়ালগুলো। অথচ তার মুক্তির প্রশ্নটি ইসরায়েল বারবার পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।
কেবল তাই নয়, বারবার তাকে বর্বোরোচিত উপায়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর থেকে তাকে নির্জনকক্ষে একা বন্দী করে রাখা হয়েছে। একাধিকবার কারাগারে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি নির্যাতন ছিল তাকে হত্যা করার কিংবা তাকে ফিলিস্তিন রাজনীতিতে সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন করে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে। তার ছেলে আরব বারঘুতি জানিয়েছেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর তার ওপর প্রহরীরা যে নির্যাতন করে তাতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন ও তার পাঁজরের পাঁচটি হাড় ভেঙে যায়।
স্কুলজীবনেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। পরে তিনি ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ইসরায়েলি সৈন্যদের হাতে বন্দী হন। কারাপ্রহরীরা তাকে উলঙ্গ করে তার যৌনাঙ্গে ক্রমাগত প্রহার করে ও উল্লাস করে বলে যে, তিনি কখনো সন্তানের বাবা হতে পারবেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি আবারও ইসরায়েলি সৈন্যদের হাতে বন্দী হন ও ছয় মাস জেল খাটেন। জেলে তিনি হিব্রু ভাষা শেখেন ও ইসরায়েলি পত্রপত্রিকা পড়তে শুরু করেন। তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন একবার কারাগারের বাইরে, অরেকবার ভেতরে—এভাবে কাটে। কারাগারে নানা বিষয়ে বইপত্র পড়ে তিনি নিজেকে সমৃদ্ধ করেন।
১৯৮৭ সালে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাকে জর্ডানে বিতাড়িত করে। তিনি স্ত্রী ও শিশুসন্তানদের নিয়ে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে চলে যান। ১৯৯৩ সালে ইয়াসির আরাফাত ও ইতজাক রাবিনের মধ্যে অসলো চুক্তির পর তিনি পশ্চিম তীরে ফিরে আসেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সেখানে ফাতাহর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি ফিলিস্তিন আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময়ে ইসরায়েলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তিনি হয়ে ওঠেন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য পৃথক দুই রাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থক। ইয়াসির আরাফাত তাকে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। তিনি আরাফাতের পর ফিলিস্তিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হয়ে ওঠেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বন্দি বিনিময়