পাহাড়ের কান্নায় বোধ জাগবে না?

জাগো নিউজ ২৪ ড. হারুন রশীদ প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০

‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই। ওই পাহাড়ের ঝরনা আমি, ঘরে নাহি রই গো উধাও হয়ে বই।’ কাজী নজরুল ইসলাম এই গানে পাহাড় আর আকাশের অসাধারণ মিতালীর কথা বলেছেন নান্দনিক উপমায়। বাস্তবে আকাশে হেলান দিয়ে না ঘুমালেও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু মানুষ এখন এমনই অকৃতজ্ঞ ও অবিমৃশ্যকারী হয়ে উঠছে যে তারা প্রকৃতির ওপর নির্বিচার অত্যাচার চালাচ্ছে। আর মানুষের নির্বিচার অত্যাচারের কারণে প্রকৃতিও হয়ে উঠেছে বৈরী। ফলে প্রকৃতির মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রতিশোধপরায়ণতা।


একে প্রতিশোধপরায়ণতাই বা বলি কী করে! পাহাড়ের ওপর থেকে গাছ কেটে, ট্রাকে ট্রাকে মাটি কেটে পাহাড়কে ন্যাড়া করে ফেললে বৃষ্টিবাদলায় তার ধসে পড়া ছাড়া আর কি কোনো উপায় থাকে? আর পাহাড়ের ঢালুর নিচে যেসব অসহায় মানুষ বসতি স্থাপন করে তাদের মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়। প্রতি বছরই পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে। তবে পাহাড়ধসের শঙ্কা এখন আর বর্ষাকেন্দ্রিক নয়। সারা বছর ধরেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারেও ঘটছে পাহাড়ধসের ঘটনা।


জাগো নিউজের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি সায়ীদ আলমগীর এর ‘মাইকিংয়ে সীমাবদ্ধ প্রশাসন, পাহাড়ধসে বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল’ শিরোনামের খবরটি আমাদের উদ্বেগাকুল করছে। বর্ষা মৌসুম চলে গেলেও ভারী বৃষ্টি হলেই সেখানে ঘটছে পাহাড়ধসের ঘটনা। এতে প্রাণহানিও হচ্ছে।


গত এক দশকে (২০১৫-২০২৫) ২১টি পাহাড়ধসের ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় মারা গেছে ৪৮ জন। এদের মাঝে ২৯ জন স্থানীয় আর ১৯ জন আশ্রিত রোহিঙ্গা। ২১টি পাহাড়ধসের ঘটনায় ১০টিই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের। এসব পাহাড়ধসে ২৫-৩০ জন আহতও হয়েছিলেন বলে প্রশাসনিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।


২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২৫টির বেশি পাহাড়ধসের ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পরও পাহাড় কাটা বা পাহাড়ে বাস থামেনি। উল্টো ৫০-৭০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া এবং পাদদেশে ঘরবাড়ি তৈরি হয় দেদারসে। পাহাড় কাটার মাটি বৃষ্টির সঙ্গে পৌরসভার ড্রেনে গিয়ে পড়ায় সামান্য বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।


যুগ যুগ ধরে কক্সবাজার শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে কয়েক লাখ মানুষ। এর মাঝে কক্সবাজার শহরেই ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার। তবে অনেকেই বলছে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা শুধু মাইকিংয়ে সীমাবদ্ধ থাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকানো যাচ্ছে না। আবার বনবিভাগ বা পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালালেও পাহাড় কাটা না থামায় মৃত্যুর মিছিল থামছে না।


শুধু কক্সবাজারেই নয় সারাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলেই ঘটছে ধসের ঘটনা। স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৭ সালের ১১ জুন। এতে প্রায় ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তখন টনক নড়েছিল চট্টগ্রাম প্রশাসনের। এ ঘটনার পর সরকার হাতে নিয়েছিল বেশ কিছু পরিকল্পনা। কিন্তু পরে তার কোনোটির বাস্তবায়ন আর হয়ে ওঠেনি। এরপরও নিয়মিতভাবে পাহাড়ধসে অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটেই চলছে।


পাহাড়ধসের ঘটনা বারবার কেন ঘটছে? তা তদন্ত করলে বের হয়ে আসে সুবিধভোগী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিবাণিজ্য। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে একশ্রেণির রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী পাহাড় কেটে অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করার কারণে অল্প বৃষ্টিতে পাহাড়ের পাদদেশ বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। কেউ কেউ ভূমি দখল নিয়ে আধা-পাকা ঘর নির্মাণ করে ভূমিহীনদের কাছে কম দামে ভাড়া দেয়। এভাবে গত ২০ বছরে চট্টগ্রামে ১১০টি পাহাড় নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও