উপনিবেশবাদের বীজ থেকে নব্য-উপনিবেশের বিষবৃক্ষ

যুগান্তর ড. মাহফুজ পারভেজ প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪০

ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১২ অক্টোবর ১৪৯২ সালে উপনিবেশবাদী শক্তির প্রতিনিধি রূপে আমেরিকা মহাদেশে প্রথম ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের পথ দেখিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি ‘কলম্বাস দিবস‘ হিসাবে পালিত হলেও লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ এ দিনটি ‘বহুসংস্কৃতির জাতির দিবস’ নামে পালন করে এবং নিজস্ব সংস্কৃতির সমন্বয়কে তুলে ধরে, যার মধ্যে রয়েছে ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ঘৃণা ও নিন্দা। বলার অপেক্ষা রাখে না, কলম্বাস যে উপনিবেশবাদের বীজ বপন করেছিলেন তা এখন বিশ্বব্যাপী নব্য-উপনিবেশের বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে।


ঔপনিবেশিক ইউরোপীয়দের আগমন ও আক্রমণে আমেরিকা মহাদেশের স্থানীয় সভ্যতার পতন ঘটে। নতুন নতুন রোগ, যেমন সিফিলিস, গনোরিয়ার বিস্তার হয়। যুদ্ধ, শোষণ এবং সাংস্কৃতিক ধ্বংসলীলা চলতে থাকে। এতে মহাদেশের আদি জনসংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং দক্ষিণ আমেরিকার সমৃদ্ধ ইনকা সভ্যতা, মায়া সভ্যতা, অ্যাজটেক সভ্যতা, চিমু সভ্যতা, মুইজকা সভ্যতা, কারাল সভ্যতা এবং চাভিন সংস্কৃতি ধ্বংসপ্রাপ্ত কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সভ্যতাগুলো আন্দিজ পর্বতমালাকেন্দ্রিক ছিল এবং তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, উন্নত স্থাপত্য এবং শিল্পকলা ছিল। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের নিপীড়ন ও আগ্রাসনে স্থানীয় সভ্যতাগুলো ধ্বংসের পাশাপাশি তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন, জীবনাচার বদলে ফেলা হয়।


ইউরোপীয় দেশগুলো কর্তৃক ঔপনিবেশিক শাসনের নিপীড়ন, নির্যাতন, শোষণ ও আগ্রাসন শুধু ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ ছিল না। কিংবা এটি স্থানীয় সভ্যতাগুলোর সামগ্রিক ধ্বংসের প্রক্রিয়া রূপেই প্রকাশিত হয়নি। বরং বলপূর্বক ধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতিকে সমূলে পরিবর্তিত করে পাশ্চাত্যভিত্তিক রূপান্তর সাধন করেছে। শুধু আমেরিকায় নয়, ভারতের প্রাচীন ও সমৃদ্ধ সভ্যতা, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম ঐতিহ্য, আফ্রিকার নিজস্বতা; যেখানে ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, আইন এবং সামাজিক নিয়মাবলি এক অনন্য ধারার সৃষ্টি করেছিল; সবকিছুই ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হয়ে তছনছ হয়ে গিয়েছে এবং বর্তমানে নব্য-উপনিবেশবাদের ত্রাসে কম্পমান রয়েছে। কারণ, সুপরিকল্পিতভাবে আরোপিত ঔপনিবেশিক নীতি, রাজনৈতিক কৌশল, সামরিক দাপট, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনাচারকে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত করেছিল। ধর্মীয় প্রথা ও দর্শনকে উপেক্ষা বা হ্রাস করা হয়, শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক কাঠামোকে বিদেশি আদর্শে অভিযোজিত করা হয় এবং স্থানীয় নৈতিক ও সামাজিক নিয়মগুলোকে উপেক্ষা করা হয়। এর ফলে স্থানীয় সমাজের সংস্কৃতির জৈবিক ও বৌদ্ধিক প্রাণশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়, যা বহু প্রজন্ম ধরে প্রভাবিত করে। এর মাধ্যমে শেকড়ছিন্ন একটি উন্মূল জনগোষ্ঠীর জন্ম হয়, যারা দেশপ্রেম ও বিশ্বাসের দিক থেকে দোদুল্যমান, আপসকামী ও সমন্বয়ের নামে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে দেশ, জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে নব্য-উপনিবেশের তাঁবেদারের ভূমিকা পালন করে। সেজন্যই, ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি শুধু সামরিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য স্থাপন করেনি, বরং নৈতিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে স্থানীয় সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নাগরিক সমাজকে একটি বড় অংশ, যারা এলিট নামে পরিচিত, তাদের মগজ ধোলাই করে অন্ধ অনুসারী বানিয়ে ফেলেছে।


ঔপনিবেশিক শোষণ শুধু ভৌগোলিক নয়, বরং মানসিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নব্য-উপনিবেশবাদের জনক, তার দৃষ্টান্ত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে। আফগানিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিটি সংকট ও সমস্যার পেছনে নব্য-উপনিবেশের কালোছায়া দৃশ্যমান। সেখানে রক্তপাত, আগ্রাসন, সংঘাত, বাস্তুচ্যুতি, ধ্বংসযজ্ঞ প্রভৃতি প্রতিটি ঘটনায় নব্য-ঔপনিবেশিক শক্তির রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ব স্থাপনের এবং অর্থনৈতিক লুণ্ঠন ও সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার মতলব রয়েছে। আর এসব হানাদার দুষ্কর্মের হোতা হিসাবে প্রতিটি ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে উপনিবেশবাদের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।


আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সন্নিহিত অঞ্চলের দেশগুলো ইউরোপিয়ানদের সামনে আবিষ্কৃত হয় ষোড়শ শতকে। জন ক্যাবট নামক এক ইংরেজ প্রশাসক প্রথম আমেরিকার পূর্ব উপকূলে পৌঁছান এবং মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া ইত্যাদি এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। অবশ্য তারও আগে, ১৪৯২ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস স্পেনের পতাকা বহন করে আমেরিকা মহাদেশের বর্তমানের পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবিষ্কার করেন। কলম্বাসের দেখানো সমুদ্রপথ ধরে অপরাপর স্প্যানিশ দখলদাররা পুরো দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশকে অধীনস্থ করেন। শুধু ব্রাজিল বাদ পড়ে স্প্যানিশ আগ্রাসন থেকে। ব্রাজিলে কায়েম হয় আরেক ঔপনিবেশিক দখলদার পর্তুগালের কর্তৃত্ব। ক্যাবট ব্রিটিশ হওয়ায় তিনি সপ্তম হেনরির হাতে শাসন ক্ষমতা তুলে দেন।


এরই মাঝে আমেরিকার অন্যান্য অঞ্চলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে এবং স্থানীয় আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের নিধন ও নির্মূল করে উপনিবেশ তৈরি হতে থাকে। উপনিবেশ গঠনের কাজে আফ্রিকা থেকে শত শত জাহাজ ভর্তি করে কালো মানুষকে দাস হিসাবে নিয়ে আসা হয়। নিউল্যান্ড বা নিউ ওয়ার্ল্ড নামে পরিচিতি সদ্য-আবিষ্কৃত নতুন অঞ্চল আমেরিকা ভূখণ্ডটি ইউরোপীয় নানা দেশের শোষণ, নির্যাতন ও আধিপত্য কায়েমের চারণভূমিতে পরিণত হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও