খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাছে কাপড় কেনাবেচার জন্য প্রসিদ্ধ। গত রোববার বাজারটি হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র। সহিংসতার আগুনে পুড়ে যায় প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ও ৪০টির মতো দোকান।
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে গত শনিবার খাগড়াছড়িতে অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত রোববার গুইমারার রামেসু বাজারে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। এ সময় গুলিতে তিন পাহাড়ির মৃত্যু হয়।
বড়দের মতো সহিংসতার আগুন কেড়ে নিয়েছে শিশু-কিশোরদের স্বপ্নও। হ্লা পাই মারমার ছোট মেয়ে ক্ল্যাচিং প্রু মারমা সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছে। নতুন বই কিনে পড়ার আনন্দটাও উপভোগ করতে পারেনি সে। তার বইগুলোও ভস্মীভূত হয়েছে আগুনে। চোখ ভরা জল নিয়ে বলল, ‘নতুন বইগুলো এখনো ভালো করে উল্টে দেখার সুযোগ পাইনি। তার আগেই ওরা আমার নতুন বইগুলো পুড়িয়ে দিল।’
বলার সময় কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে এই কিশোরীর। চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসে জলের ধারা। কান্নার আওয়াজ নেই। কিন্তু মায়ের দুঃখ, নতুন বইয়ের শোক, ভেঙেচুরে দিয়েছে ক্ল্যাচিংকে।
রোববারের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সে বলে, ‘সকাল থেকে মিছিল-মিটিং হচ্ছিল। আমাদের পাড়ার কেউ তো সেখানে ছিল না। তার পরেও আমাদের ঘরবাড়ি-দোকান সব জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। যখন আগুন দিচ্ছিল, তখন আমি, মা ও বাবা তিনজন তিন দিকে পালিয়ে যাই। কে কোন দিকে যাচ্ছি তার কিছুই জানতাম না। যাওয়ার আগে শুধু সার্টিফিকেটগুলো (সনদ) নিতে পারছি।’