আগুনে বসতবাড়ির সবটুকু পুড়ে ছাই হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পড়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া টিন। এর ভেতরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে ভস্মীভূত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। উঠানে পড়ে আছে পোড়া মোটরসাইকেলের কাঠামো। রক্ষা পায়নি আয়–উপার্জনের দোকানটিও।
এ রকম বিধ্বস্ত বসতভিটার পাশে বিষণ্ন মনে বসে ছিলেন মিবু মারমা। ঘর হারানো কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর স্বামী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য।
গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজার এলাকায় দেখা যায় এ দৃশ্য। গত রোববার বিক্ষোভ ও সহিংসতার সময় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মিবু মারমার বাড়ি ও খাবারের দোকান। ওই দিন সহিংসতার সময় বাজারের দোকানপাট, বসতঘর ও ভবনে আগুন দেওয়া হয়। বসতঘর ও দোকানমালিকদের অধিকাংশই পাহাড়ি। কিছু প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বাঙালি। গতকাল সকালেও বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।
শুধু মিবু মারমার ঘর নয়, বাজারজুড়ে চারদিকে পোড়া ক্ষত। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরেও কিছু ঘর টিকে থাকলেও তা আর মেরামতের উপযোগী নেই। সব হারানো পাহাড়ি মানুষের অবস্থা এখন অসহায়। তাঁদের কারও চোখে জল, কারও মধ্যে রাগ–ক্ষোভ। আবার এর মধ্যে অজানা আতঙ্ক ভর করেছে পাড়াবাসীর মধ্যে।
বসতবাড়ি ও দোকান পুড়ে যাওয়ায় সামনের দিন নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন মিবু মারমা। তাঁর বেদনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আগুন থেকে মেয়ের আদুরে বিড়ালকে রক্ষা করতে না পারার কষ্ট। তিনি বলেন, ‘কিছুই নাই, সব ছাই। ছাইয়ের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। ঢুকেও গিয়েছিলাম। কিন্তু স্বজনেরা আটকিয়েছিলেন। আমার ঘরবাড়ি না পুড়ে, আমাকেও আগুনের মধ্যে দিয়ে দিত। তাহলে আর এত দুঃখ–কষ্ট সহ্য করতে হতো না।’