
ঢাকার গৃহকর্মীরা আইনি অধিকার আর কবে পাবেন
ঢাকা শহরে গৃহকর্মীর সংখ্যা বিস্তর। নগরজীবনের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই শ্রমবাজারও দ্রুত বেড়েছে। তবে এই বাজার সবার জন্য এক রকম নয়। বাড়ির মালিক কোথায় থাকেন আর কতটা আর্থিক সামর্থ্য আছে, তার ওপরই নির্ভর করে কোন ধরনের গৃহকর্মী পাওয়া যাবে।
ঢাকার গৃহকর্মীর বাজারকে মোটামুটি তিন ভাগে ফেলা যায়—গুলশান-বনানী-বারিধারার মতো অভিজাত এলাকা, উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের আবাসিক এলাকা, আর নিম্নমধ্যবিত্তদের মহল্লা। অবশ্য বাস্তবে এ বিভাজন একেবারে খাঁটি নয়, ব্যতিক্রম থাকেই।
এটাও মনে রাখতে হবে, ঢাকার গৃহকর্মীদের বিশাল অংশই নারী। ফলে এই পেশার ভেতর একধরনের নারী-পটভূমি এবং নারীর অভিজ্ঞতা জড়িয়ে আছে।
শহরে গৃহকর্মীরা মূলত তিন ধরনের কাজ করে থাকেন। প্রথমেই আছে সার্বক্ষণিক গৃহকর্মী। তাঁরা মালিকের বাড়িতেই থেকে সারা দিন-সারা রাত কাজ করেন। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা মালিকই করে দেন।
দ্বিতীয় ধরনের কর্মীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মালিকের বাড়িতে কাজ করে রাতে নিজের বাসায় ফেরেন। তাঁরা সাধারণত পরিবার নিয়ে শহরে বাস করেন।
আর তৃতীয় ধরন হলো, ঠিকে গৃহকর্মী। তাঁরা এক বাড়িতে নির্দিষ্ট সময় ধরে কিছু কাজ করে চলে যান অন্য বাড়িতে। এভাবে দিনে পাঁচ-ছয়টি বাড়িতে কাজ করেন। ঘর ঝাড়পোছ, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, পানি তোলা—এ ধরনের বড় কাজই তাঁরা সামলান। তবে বাঁধা কাজের বাইরে কিছু করার দায় তাঁদের নেই। আর এ ব্যবস্থায় সাধারণত খাওয়াদাওয়ার কোনো সুবিধা থাকে না।
অভিজাত এলাকার শ্রমবাজার
গুলশান, বনানী বা বারিধারার মতো জায়গায় একজন গৃহকর্মী মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পান। খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়োগকারীরই থাকে। পাশাপাশি কিছু পোশাক-আশাক, হালকা অসুখে ওষুধ, আর যদি সার্বক্ষণিক হন, তবে থাকার জায়গাও দেওয়া হয়। সাধারণত তাঁদের কাজের সময় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। সপ্তাহে একদিন ছুটি থাকে, বছরে আরও এক-দুই সপ্তাহ ছুটি মেলে। তবে বড় কোনো অসুখ হলে চিকিৎসার খরচ গৃহকর্মীকেই বহন করতে হয়। কোথাও কোথাও তাঁদের বিনোদনের জন্য আলাদা টেলিভিশনও দেওয়া থাকে।
মধ্যবিত্ত এলাকার শ্রমবাজার
এখানে গৃহকর্মীদের বেতন গড়ে পাঁচ-সাত হাজার টাকা। কাজের শর্তগুলো লিখিতভাবে ঠিক করা হয় না, বরং মৌখিক বোঝাপড়াতেই চলে। সাধারণত দিনে দুবেলা খাবার, বছরে একবার ঈদে নতুন পোশাক, আর একবার গ্রামে যাওয়ার ছুটি থাকে। হালকা অসুখে ওষুধপত্রের ব্যবস্থাও মালিক করে দেন। তবে থাকার জায়গার মান খুব খারাপ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রান্নাঘরের পাশে বা বারান্দায় মাদুর পেতে ঘুমাতে হয়। প্রথম শ্রেণির বাজারের মতো আলাদা ঘর এখানে মেলে না।
নিম্নবিত্ত এলাকার শ্রমবাজার
অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহকর্মীরা। তাঁদের অধিকাংশই কিশোর-কিশোরী। মাসিক বেতন সাধারণত দুই-তিন হাজার টাকার বেশি হয় না। ঠিকে কাজ করলে মাসে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া যায়। খাবারের ব্যবস্থা থাকে, শোবারও একটা সাধারণ জায়গা দেওয়া হয়। পোশাকের জন্য মালিকের পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পুরোনো জামাকাপড়ই ভাগ্যে জোটে। তবে কিছু পরিবারে দেখা গেছে, তাঁদের জন্য পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়।
অর্থনৈতিক দিক থেকে গৃহকর্মীদের জীবন সব সময় একধরনের চাপের মধ্যে থাকে। ঢাকায় কাজ করা অনেক গৃহকর্মীরই পরিবার থাকে শহরেই। তাঁদেরও ছোট ছোট শিশু আছে, কারও সন্তান আবার স্কুলে যায়। গৃহকর্মী যখন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অন্যের বাড়ির সন্তানদের দেখাশোনা করেন, তখন তাঁর নিজের সন্তানকে দেখবে কে? অনেক ক্ষেত্রেই এ জন্য আলাদা লোক রাখতে হয়, আর সেই খরচ চলে যায় গৃহকর্মীর উপার্জিত সামান্য বেতনের ভেতর থেকেই।
- ট্যাগ:
- মতামত
- আইনি অধিকার
- গৃহকর্মী