‘জেন-জি’র আন্দোলন–অভ্যুত্থানে গত সপ্তাহে নেপালে এক উত্তাল অবস্থা দেখা গেল। শুধু জেন-জির কথা বললে ভুল হবে, নেপালের যুবারাও রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। প্রাথমিক উপলক্ষ ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা।
৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভে ১৯ জনের মৃত্যুর পর উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো দেশ। পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।
সরকার কিংবা বিরোধী দল, সব পক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এমন একটি বাড়িতে দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী। মন্ত্রীদের বিবস্ত্র করে রাস্তায় পেটানো হয়েছে।
সহিংসতার আগুনে যে কেবল রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িঘরই পুড়েছে, তা–ই নয়, পুড়ে গেছে সর্বোচ্চ আদালতের নথি, পার্লামেন্ট ভবন, প্রধানমন্ত্রীর অফিসসহ সরকারি অফিসের দলিল-দস্তাবেজ। এক বছর আগে চব্বিশের জুলাই–আগস্টে বাংলাদেশে সংঘটিত অনেক ঘটনার সঙ্গে এর মিল আছে সত্যি।
- রাজনৈতিক নেতারা সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে না পারলে কেবল আদর্শের বুলি আওড়ালে মানুষের পেট ভরে না।
- বাংলাদেশের এখনকার রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের উচিত নিজেদের ব্যর্থতার ভার অন্যের কাঁধে না চাপিয়ে নতুন করে আয়নায় মুখ দেখা।
কিন্তু বাংলাদেশে ৫ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের পরপরই এর সম্মুখসারির নেতারা প্রত্যেকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ফলে সরকার ও পুলিশের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি, সেনাবাহিনীর একরকম নিষ্ক্রিয়তা সত্ত্বেও এ দেশের জেন-জিরা দ্রুতই নিজেদের সংবরণ করেছিলেন।
ছাত্র–তরুণেরা বরং রাস্তায় নেমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন রাতারাতি—রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন, ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন, মাদ্রাসার অনেক ছাত্র মন্দির পাহারা দিয়েছেন, এলাকার মানুষ একজোট হয়ে ডাকাত ঠেকিয়েছেন।
অভ্যুত্থানের অল্প কিছুদিন পর ভয়াবহ বন্যা ধেয়ে এলে পুরো দেশের মানুষ এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাই নেপালের সঙ্গে চব্বিশের বাংলাদেশের মিল-অমিল দুই–ই আছে।
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ভরসা খুব একটা না থাকলেও দলগুলো গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিল। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের পাশাপাশি তারাও নতুন সরকার গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। দিন শেষে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ব্যাপারে দেশের মানুষকে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই ভরসা রাখতে হয়।