ফ্যাসিবাদের মানদণ্ডে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামল

প্রথম আলো আরিফ রহমান প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:২৫

আমাদের দেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ‘ফ্যাসিস্ট’ শব্দটি প্রায়ই আলংকারিক গালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু যখন ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকে এ আয়নায় ফেলা হয়, তখন এটি আর গালি থাকে না, হয়ে ওঠে একটি কাঠামোগত ও তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণ। বেনিতো মুসোলিনি, অ্যাডলফ হিটলার ও পল পটের রাষ্ট্র পরিচালনার মডেলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের নীতির তুলনা করলে যে সাদৃশ্য ফুটে ওঠে, তা যুগপৎ বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক।


ফ্যাসিবাদকে বুঝতে হলে এর তাত্ত্বিক কাঠামো জানা জরুরি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবার্ট প্যাক্সটনের মতে, ফ্যাসিবাদের কয়েকটি মূল স্তম্ভ হলো একনায়ক বা নেতার অন্ধ অনুকরণ (লিডার কাল্ট), সহিংস দলীয় মিলিশিয়া বাহিনীর উপস্থিতি, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ‘অভ্যন্তরীণ শত্রু’ তৈরি করা, আইনের শাসনকে ‘আইনের দ্বারা শাসনে’ পরিণত করা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেতর থেকে ফাঁপা করে দেওয়া এবং রাষ্ট্রীয় প্রচারণাকে ভীতি ও দমনের হাতিয়ার বানানো। চলুন, এই মানদণ্ডগুলো দিয়েই গত দেড় দশকের আওয়ামী শাসনকে বিচার করা যাক।


ফ্যাসিবাদের প্রথম শর্তই হলো নেতা ও রাষ্ট্রকে সমার্থক করে তোলা। মুসোলিনির দর্শন ছিল, ‘রাষ্ট্রের ভেতরেই সবকিছু, রাষ্ট্রের বাইরে বা বিরুদ্ধে কিছু নয়’। হিটলারের ‘ফিউরার প্রিন্সিপ’ অনুযায়ী, নেতাই ছিলেন আইন।


বাংলাদেশে গত দেড় দশকে শেখ হাসিনাকে ‘উন্নয়নের রূপকার’ থেকে ‘মানবতার মা’—ইত্যাদি বিশেষণে মহিমান্বিত করে ব্যক্তিপূজার এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করা হয়। তাঁর বা তাঁর বাবার যেকোনো সমালোচনাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ বা ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা’ হিসেবে চিত্রায়িত করার প্রবণতা ছিল প্রাতিষ্ঠানিক। রাষ্ট্র, সরকার ও দলকে একাকার করে ফেলার এ প্রক্রিয়া ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর প্রথম ও প্রধান লক্ষণ।


দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী ও সিন্ডিকেট তৈরি


মুসোলিনির ব্ল্যাকশার্টস বা হিটলারের এসএ বাহিনীর কাজ ছিল রাস্তায় সহিংসতা দেখিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করা। বাংলাদেশে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ভূমিকা বিভিন্ন সময়ে এই দলীয় মিলিশিয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাসের প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে সিলেটে এমসি কলেজে গৃহবধূকে দলগত ধর্ষণ, ২০১৯ সালে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা—এ ঘটনাগুলো দলীয় সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় দেওয়ার উদাহরণ। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হেলমেট পরিহিত সশস্ত্র দলীয় কর্মীদের সহিংস আক্রমণ এই ‘ডাবল ব্যারেল’ দমন কৌশলেরই নগ্ন রূপ, যেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় সন্ত্রাসীরাও একযোগে কাজ করেছে।


ফ্যাসিবাদের অর্থনৈতিক মডেলেও দলীয়করণের জায়গা থাকে, যাকে ‘করপোরেটিজম’ বলা হয়, যেখানে রাষ্ট্র ও অনুগত পুঁজিপতিদের একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়। এখানে মুক্তবাজার বা সমাজতন্ত্র—কোনোটিই থাকে না; বরং রাষ্ট্র দলীয় আনুগত্যের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে একচেটিয়া সুবিধা দেয়, যা একধরনের ‘রেন্ট-সিকিং’ বা ভাড়া খাটা অর্থনীতি তৈরি করে। এর মূল উদ্দেশ্য থাকে দুটি—রাজনৈতিক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থের জোগান নিশ্চিত করা এবং একটি অনুগত ধনিক শ্রেণি তৈরি করা, যারা শাসকদের ক্ষমতার অন্যতম খুঁটি হিসেবে কাজ করবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও