
সংকট কাটাতে প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ
লেখার শুরুতেই একটা গল্প বলি। সবার জানা, আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে দাঁতের ডাক্তার মানে ডেন্টাল সার্জন খুব একটা নেই। আর নেই বলেই বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না এ কথা প্রবাদ পর্যন্ত হয়ে গেছে! একবার দাঁতের সমস্যা নিয়ে এক রোগী গেছে হাসপাতালে। কিন্তু একই সমস্যায় রোগী কয়েকশ, ডেন্টাল সার্জন একজন। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে রোগী সার্জন সাহেবের সহকারীকে জিজ্ঞেস করলো,
: ডাক্তার সাহেবের সিরিয়াল কবে পাবো?
উনি নির্লিপ্ত হয়ে বললেন, এক মাস পর।
রোগী চিন্তায় পড়ে বললো, এক মাস! তত দিনে দাঁত সব নাই হয়ে যাবে তো!
সহকারী জানাল, আহা, চিন্তা নেই মাড়িরও চিকিৎসা করেন আমাদের স্যার।
আমাদের দেশ নানা খাতে এগিয়ে গেলেও ডেন্টাল সেবা এখনো অনেক পিছিয়ে। শহরাঞ্চলে কিছুটা উন্নত ব্যবস্থা থাকলেও গ্রামাঞ্চলে ডেন্টাল সেবা কার্যত নেই বললেই চলে। উপজেলা পর্যায়ে ডেন্টাল সার্জনের সংখ্যা খুবই সীমিত, ফলে সাধারণ মানুষ প্রাথমিক সেবা থেকেও বঞ্চিত হয়। অনেক সময় রোগীদের বিভাগীয় হাসপাতালে যেতে হয়। আর সেখানে চিকিৎসা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
এছাড়া অজ্ঞতা ও দারিদ্র্যের কারণে গ্রামীণ জনগণ হাতুড়ে ডাক্তার বা অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের কাছে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়। ফলে দাঁতের সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করে এবং অনেক ক্ষেত্রে ভয়াবহ জটিলতা দেখা দেয়। মানব জীবনের স্বাভাবিক চলাচল এবং সুস্থতার জন্য দাঁত ও মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্য অপরিহার্য। শুধু খাদ্য চিবানো নয়, দাঁতের স্বাস্থ্য আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, আত্মবিশ্বাস ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। দাঁতের সমস্যার চিকিৎসা যারা করেন, তাদের বলা হয় ডেন্টাল সার্জন। বাংলাদেশে এই পেশার ইতিহাস দীর্ঘ হলেও সম্ভবত এ পেশা ভয়ানক চ্যালেঞ্জের মুখে এখনো। কিন্তু কেন?
ইতিহাস ঘেঁটে জেনেছি, বাংলাদেশে আধুনিক অর্থে দাঁতের চিকিৎসা এবং ডেন্টাল সার্জনের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫০-এর দশকে। আগে গ্রামের মানুষ দাঁতের ব্যথা বা ক্ষয় সমস্যার জন্য স্থানীয় হস্তচিকিৎসক বা অশিক্ষিত দন্তচিকিৎসকের ওপর নির্ভর করতেন। তারা মূলত দাঁত তোলা বা সামান্য ব্যথা উপশমের কাজ করতেন। তবে তখনকার চিকিৎসা ছিল সীমিত এবং অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক। আধুনিক চিকিৎসার অভাবে রোগীরা প্রাথমিক সমস্যার সময়ই সঠিক চিকিৎসা পেত না এবং ছোটোখাটো সমস্যা অনেকক্ষেত্রেই জটিল রোগে পরিণত হতো। ১৯৫০-৬০-এর দশকে পাকিস্তান সরকারের সময় ঢাকায় প্রথম ডেন্টাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হয়। এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন চিকিৎসক আধুনিক দন্তচিকিৎসার কার্যক্রম শুরু করেন।
এ সময় থেকেই দেশে ডেন্টাল সার্জন পেশার ভিত্তি তৈরি হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাত আরও গতিশীল হতে শুরু করে। বিশেষ করে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ডেন্টাল ইউনিট খোলার মাধ্যমে পেশাটির বিস্তার ও মানোন্নয়ন ঘটে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল মেডিকেল কলেজে ডেন্টাল ইউনিট স্থাপন করা হয়।