 
                    
                    সিলেটের আস্ত টিলাকে পুকুর বানিয়ে ফেলেছে পাথরখেকোরা
গ্রামের নাম চিকাডোহর। ইউনিয়ন ইসলামপুর। উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। ভোলাগঞ্জ বাজার থেকে সিলেট শহরে আসতে হাতের ডান দিকে সরু আঁকা-বাঁকা রাস্তা। সে রাস্তা ধরে এগোলেই শাহ আরেফিন (শার্ফিন) টিলা। বর্ষা মৌসুমে ভাঙাচোরা সড়কের কোথাও কোথাও হাঁটুপানি। কষ্টেসৃষ্টে গন্তব্যে যেতে মোটরসাইকেলই একমাত্র ভরসা।
লাল মাটি আর লাল পাথরের টিলা। সৌন্দর্য ছিল মোহনীয়। টিলায় উঠে পাশের দেশ ভারতের মেঘালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতেন পর্যটকরা। এটা বছরখানেক আগের কথা। এখন দেখে বোঝারই উপায় নেই যে এটি টিলা ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর সিলেটে একযোগে শুরু হওয়া পাথর লুটের বলি এ টিলাটিও।
শার্ফিন টিলার লাল মাটি এখন ধূসর। পাথরের চিহ্ন নেই। টিলাও নিশ্চিহ্ন। টিলার মাটি-পাথর সবই পাথরখেকোদের পেটে! প্রাকৃতিক টিলা এখন মনুষ্যসৃষ্ট পুকুর! বৃষ্টির পানি জমে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে আগে এখানে টিলা ছিল কেউ বিশ্বাসই করবে না। যারা প্রথমবার যাবে তারা জানবেও না যে তারা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে ছিল কোনো মাটি কিংবা পাথুরে টিলা।
গ্রামবাসীর মনে এখন অজানা আতঙ্ক। অপরিচিত লোক দেখলেই বিরক্তির ছাপ। এদিক-ওদিক আর মানুষের মুখের দিকে তাকাতে থাকে। একজন আরেকজনের সঙ্গে কানাকানি করে, ‘প্রশাসন অথবা মিডিয়ার লোক’। কথা বলতে চায় না স্থানীয়দের কেউই। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে পর্যটক হিসেবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও একজন আরেকজনকে ইশারায় সতর্ক করে।
স্থানীয় সূত্র আর জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্যের এই টিলা পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় হলেও বিগত সময়ে তেমন পরিচিতি পায়নি। জানাশোনা লোকজন এখানে মূলত পর্যটকদের নিয়ে আসতো। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় কিছু পাথর ব্যবসায়ী পুরোদমে এই টিলার খনন শুরু করে। হাজার হাজর ট্রাক পাথর সরিয়ে নেয়। টিলার পাথর লাল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। মূলত টিলা কেটে পাথর সংগ্রহ করে সেগুলো পাঠানো হতো পার্শ্ববর্তী ক্রাশার মেশিনে। সেখানে পাথর ভেঙে পরে বিক্রি করে দেওয়া হতো। এভাবে এক বছরে আস্ত একটি টিলা খনন করে ছোট-বড় পুকুর বানিয়ে ফেলা হয়েছে।
 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                