
উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৫ লাখ আসন ফাঁকা থাকার দায় কার?
দীর্ঘদিন ধরেই একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগে-পরে একদিকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়ে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন থাকছে, ছুটাছুটি করছে, খোঁজখবর নিচ্ছে, অনেকগুলো আবেদন করছে, কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারলে মন খারাপ করছে; অপরদিকে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়ন করানো হয় এমন অনেক অনেক কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ ও কর্তাগণ শিক্ষার্থী বাড়ানোর জন্য প্রচার-প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে এবং হন্যে হয়ে বিভিন্ন স্কুলে, মাদ্রাসায় ও শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ছোটাছুটি করছে! অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা আরো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চায়, আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরো বেশি শিক্ষার্থী চায়। কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরে আরো ভালো ফলাফল দেখানোর জন্য আরো ভালো ভালো শিক্ষার্থী বাছাই করে নিতে চায়, পেয়ে যায়। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও কিংবা সচ্ছলতা ধরে রাখার জন্য কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পায় না! বিশেষ বিবেচনায় টিকে থাকে।
শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান বিদ্যমান। অত্যন্ত দুঃখজনক হচ্ছে, আমাদের অনিয়ম ও অপরিকল্পিত ক্রিয়া-কলাপের কারণেই ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এই অশুভ ব্যবধান, বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাপক অপচয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দেখা যায় যে, “সারা দেশে বর্তমানে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে মোট আসন রয়েছে ২২ লাখ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে রয়েছে প্রায় ৯ লাখ আসন এবং সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে রয়েছে আরও ২ লাখ ৪১ হাজার আসন। সামগ্রিকভাবে একাদশে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ৩৩ লাখ ২৫ হাজার।” [দৈনিক ইত্তেফাক, ১৪ জুলাই ২০২৫] অথচ এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৫ এ উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। পরে পুনঃনিরীক্ষণে উত্তীর্ণ আরও ৪,৯৮৩ জন অর্থাৎ মোট উত্তীর্ণ ১৩,০৮,৪০৯ জন।
এরমধ্যে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রথম ধাপে সব মিলিয়ে আবেদন করেছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩৬ জন শিক্ষার্থী। পূর্বের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, পরবর্তী ধাপগুলোতে নতুন আবেদন তেমন বৃদ্ধি পায় না, প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের আবেদনই বেশি হয়। এতে দেখা যাচ্ছে ও বুঝা যাচ্ছে, প্রায় সাড়ে ২২ লাখ আসন শূন্য থাকছে, যা শিক্ষার্থীর ঘাটতিতে ভুগতে থাকা বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য কঠিন বার্তা! অপরদিকে গত ২০২৪ সালে একাদশ শ্রেণিতে ফাঁকা আসনের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ লাখ; যা বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণিতে বিদ্যমান। অর্থাৎ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি মিলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বর্তমানে ফাঁকা আসনের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৩৫ লক্ষাধিক।
প্রশ্ন হচ্ছে, সারা দেশে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৩৫ লক্ষাধিক আসন শূন্য থাকার দায় কার? একদিকে বিপুল সংখ্যক আসন শূন্য থাকছে অপরদিকে আরো নতুন নতুন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হচ্ছে! একটু পিছনে তাকালেই দেখা যায় যে, গত ২০২২ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পরে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ আসন খালি ছিল। তখন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশ করেছিল ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষার্থী। আর সারাদেশে একাদশ শ্রেণিতে মোট আসন ছিল ২৫ লাখের বেশি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- একাদশ শ্রেণির ভর্তি