
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার মানসিক কৌশল
দিনভর পরিশ্রমের পর শরীর যখন বিশ্রাম চায়, তখন স্বাভাবিকভাবে ঘুম আসার কথা।
তবে অনেকেরই বিছানায় শোয়ার পর মন নানান দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতায় ভরে যায়। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়। কখনও কখনও পুরো রাত কেটে যায় অনিদ্রায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু মানসিক কৌশল চর্চা করলে এ ধরনের সমস্যা কমে যায় এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া সম্ভব হয়।
‘হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল’য়ের ঘুম বিষয়ক গবেষক ও প্রশিক্ষক রেবেকা রবিন্স সিএনএন ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “এই কৌশলগুলোকে ঘুমের ‘টুলকিট’ হিসেবে ভাবতে পারেন। নিয়মিত চর্চা করলে ঘুমিয়ে পড়া সহজ হয়ে যায়। আর রাতভর বিছানায় এপাশ-ওপাশ করার যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি মেলে।”
নিয়ন্ত্রিত গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস
গভীর শ্বাস নেওয়া শরীর ও মনের চাপ কমানোর বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটি পদ্ধতি। এটি ঘুমের আগে বা রাতের মধ্যে ঘুম ভেঙে গেলে কাজে লাগতে পারে।
শ্বাসের গতি বদলালে হৃদস্পন্দন ধীর হয়, রক্তচাপ কমে এবং শরীরের বিশ্রাম ও হজম ব্যবস্থা সক্রিয় হয়। ফলে দুশ্চিন্তা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।
রেবেকা রবিন্স বলেন, “শ্বাসের প্রতি সচেতন মনোযোগ মাথার ভেতরের অগণিত চিন্তা থেকে দূরে সরাতে সাহায্য করে।”
শ্বাস-প্রশ্বাসের নানান কৌশল আছে। এর মধ্যে ‘ডায়াফ্রাগম্যাটিক ব্রিদিং’ বা পেট দিয়ে শ্বাস নেওয়া সবচেয়ে কার্যকর।
নাক দিয়ে ছয় গণনা পর্যন্ত শ্বাস নিন এবং খেয়াল করুন পেট ফুলছে কি-না। এরপর ধীরে ধীরে ছয় গণনা পর্যন্ত শ্বাস ছাড়ুন।
যুক্তরাষ্ট্রের মানসিক ও শারীরিক প্রশিক্ষক ডানা সান্তাস পরামর্শ দেন, “শ্বাস নেওয়াকে হালকা ও শব্দহীন রাখুন এবং ছাড়ার সময় যেন মনে হয় এক ধরনের স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “শ্বাসের শব্দ, অনুভূতি ও পথকে লক্ষ করুন। নাক দিয়ে ভেতরে ঢুকে গলা পেরিয়ে ফুসফুসে যাচ্ছে, আবার বেরিয়ে আসছে। মন যদি অন্যদিকে চলে যায়, আবার শ্বাসের দিকে ফিরিয়ে আনুন।”
ধ্যান
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধ্যান শরীর ও মনকে শান্ত রাখার উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধ্যান মানুষের আত্মসমালোচনার প্রবণতা কমায় এবং ধূমপান, ব্যথা, নেশা কিংবা বিষণ্নতার মতো সমস্যার চিকিৎসায় সাহায্য করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘উইসকনসিন-ম্যাডিসন’ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. রিচার্ড ডেভিডসন পরামর্শ দেন, “দিনে মাত্র ৩০ মিনিট ধ্যান করলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যক্রমে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।”
ডেভিডসন বলেন, “এ ধরনের মানসিক ব্যায়াম মানুষকে শেখানো হলে মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালি ও গঠন বদলে যায়।”
কল্পনা বা ভিজুয়ালাইজেশন
মানসচক্ষে শান্ত ও নিরিবিলি জায়গার ছবি আঁকা ঘুমের আরেকটি কার্যকর উপায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিস্তারিত কল্পনা করেন তারা অবাঞ্ছিত চিন্তাগুলো সহজে সরিয়ে দিতে পারেন।
যেমন- নিজেকে সমুদ্রতটে কল্পনা করা। মনে মনে ভাবতে হবে— সূর্যের আলোয় গা গরম হচ্ছে, বাতাসে লবণাক্ত গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, পায়ের নিচে ঠাণ্ডা বালুর স্পর্শ অনুভূত হচ্ছে।
রেবেকা রবিন্স বলেন, “শ্বাসকে কল্পনার সঙ্গে মেলানো খুবই কার্যকর। যেমন— শ্বাস নেওয়ার সময় মনে করুন আলো বড় হচ্ছে, আর ছাড়ার সময় সেই আলো ছোট হয়ে আসছে।”
ক্রমান্বয়ে পেশি শিথিলকরণ
অনেকেরই অজান্তে শরীরের পেশিতে টান তৈরি হয়, যা পরে মাথাব্যথা বা পিঠব্যথায় রূপ নেয়। ‘প্রোগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন’ বা ধাপে ধাপে পেশি শিথিল করার কৌশল এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে।