'তোমারে লেগেছে এত যে ভালো, চাঁদ বুঝি তা জানে'—তুমুল জনপ্রিয় এই গানটি 'রাজধানীর বুকে' সিনেমার। এই সিনেমার নায়িকা শবনম। ষাটের দশকের সেরা রোমান্টিক নায়িকা তিনি। সাদাকালো যুগে অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা। পাকিস্তানেও উর্দু ভাষার সিনেমায় বাজিমাত করেছেন।
তার অভিনীত আলোচিত কয়েকটি সিনেমার মধ্যে রয়েছে—'রাজধানীর বুকে', 'হারানো জোয়ার ভাটা', 'কখনো আসেনি', 'রাজা সন্ন্যাসী', 'আম্মাজান', 'শর্ত', 'সন্ধি', 'নাচের পুতুল', 'নাচঘর', 'আমার সংসার' ইত্যাদি।
১৭ আগস্ট শবনমের জন্মদিন।
এক সময়ের আলোচিত ও সাড়া জাগানো এই নায়িকার বাসায় কয়েক বছর আগে এক বিকেলে বসেছিল আড্ডা।
সেদিন ছিল হেমন্তের বিকেল। রাজধানীতে হালকা শীত পড়েছিল। সাংবাদিক অভি মঈনুদ্দীন ও আমি হেমন্তের পাতাঝরা এক বিকেলে পৌঁছে যাই সোনালি দিনের নায়িকা শবনম আপার বারিধারার বাসায়। লিফট দিয়ে নেমে দরজায় কলিংবেল চাপতেই তিনি দরোজা খুলে হাসিমুখে ভেতরে যেতে বলেন। পরনে সুন্দর একটি শাড়ি, তার ওপর পাতলা চাদর জড়ানো। আমাদের ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলেন।
আমি একদৃষ্টিকে তাকিয়ে শবনম আপাকে দেখছি। যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। ভাবছিলাম—এই মানুষটির 'রাজধানীর বুকে' সিনেমাটি কতবার দেখেছি! আর সেই মানুষটিই এখন আমার সামনে!
আড্ডা শুরু করলেন শবনম আপা নিজেই। বললেন, 'কী ব্যাপার? তোমরা দুজন চুপ করে আছ কেন?'
বললাম, আপা আপনিই বলুন। আজ শুধু শুনব। আপনার গল্প শুনতে এসেছি।
অভি বলল, 'দিদি গল্প করতে এসেছি। আপনি গল্প করবেন আর আমরা শুনব। আপনার জীবনের গল্প জানব।'
তিনি হাসলেন। চাদরটা ঠিক করে নিয়ে বললেন, 'আচ্ছা। তোমাদের প্রশ্ন থাকলে করো। তবে, রেকর্ড করতে পারবে না। স্মৃতি থেকে যতটা পারো লিখো।'
বিদায় নেওয়ার সময় আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, 'সাজু, আমি তো বাসায় শাড়ি পরি না, থ্রি-পিস পরি। তুমি প্রথমবার এসেছ, তোমার সৌজন্যেই আজ শাড়ি পরেছিলাম।'
এই কথা শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। আজও কথাটি কানে বাজে। আজও গুণগুণ করে তার সিনেমার গানটি গাই—'তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে...'
৮০তম জন্মদিনে কিংবদন্তি এই নায়িকার প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা।