জুলাই অভ্যুত্থানের অনেক আগেই পুলিশ বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্রে সজ্জিত করে তোলা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা গত বছরের ১৮ জুলাই বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের জন্য টেলিফোনে নির্দেশ দেন। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে তিন সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে কেন এত মানুষ প্রাণ হারান তা বুঝতে হলে তাকাতে হবে পুলিশের অস্ত্রভান্ডারের দিকে।
সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, অভ্যুত্থানের আগের বছরগুলোতে বাংলাদেশ পুলিশ প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্রের চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি প্রাণঘাতী অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত করেছিল। ফলে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ সেই অস্ত্রই ব্যবহার করেছে যেগুলো তৈরি-ই করা হয়েছে মানুষকে হত্যার জন্য।
প্রাণঘাতী অস্ত্রের পেছনে পুলিশের বিপুল ব্যয়
২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ ২ কোটি ৪৯ লাখ পিস প্রাণঘাতী গুলি কেনে। একই সময়ে টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেটের মতো সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল মাত্র ৩০ লাখ ইউনিট, যা প্রাণঘাতী অস্ত্রের সাত ভাগের এক ভাগ মাত্র।
আমদানি নথি অনুযায়ী, এই তিন বছরে প্রাণঘাতী অস্ত্রের জন্য ২৪০ কোটি টাকা খরচ করা হয়, যা রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাসের মতো সরঞ্জামের জন্য ব্যয় করা ১৯১ কোটি টাকার প্রায় দেড় গুণ বেশি।
পুলিশের অস্ত্রের পেছনে এই বিনিয়োগ গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটাতে ভূমিকা রাখে। প্রশ্ন ওঠে, একটি বেসামরিক বাহিনীর হাতে সামরিক গ্রেডের অস্ত্র তুলে দেওয়া কতটা যৌক্তিক।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে যুদ্ধের রাইফেল
গণঅভ্যুত্থানের দুই বছর আগে, ২০২২ সালে, পুলিশ ১৮ হাজার ৭.৬২ মিমি সেমি-অটোমেটিক রাইফেল আমদানি করে।
পরবর্তীতে এই অস্ত্রগুলো দিয়েই বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে দেখা যায়, যা দ্য ডেইলি স্টার এবং জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে উঠে আসে। এই রাইফেলগুলোর জন্য মজুত ছিল ১০ লাখ তাজা গুলি।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের বর্ম ভেদ করার জন্য এই গুলি তৈরি করা হয়েছে, সাধারণ কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য নয়। সেনাবাহিনী এবং বিজিবি, র্যাবের মতো আধা-সামরিক বাহিনীর কাছেই এ ধরনের অস্ত্র থাকে। বেসামরিক প্রয়োজনে এই গুলি কেনার কোনো সুযোগ নেই।'