You have reached your daily news limit

Please log in to continue


মাহেরীন চৌধুরী : অনন্য এক শিক্ষক

আজ যখন আমরা শোকাহত অকালে ঝরে যাওয়া মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কচিপ্রাণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মাহেরীন চৌধুরীর নির্মম মৃত্যুতে স্তব্ধ, তখন এ মুহূর্তটি কেবল বেদনার নয়; বরং এটি হয়ে উঠেছে গভীর শ্রদ্ধা, অনন্ত কৃতজ্ঞতা এবং এক অনিবার্য দায়বোধের আহ্বান। স্বপ্নেবিভোর কৈশোরে, অষ্টম শ্রেণিতে পাঠ্য হিসাবে ইব্রাহিম খাঁর ‘ভাঙা কুলো’ গল্পের অংশ বিশেষ পড়েছিলাম ‘সোনার হরফে লেখা নাম’ শিরোনামে। ভাষা আন্দোলনের আবহে রচিত সেই গল্পটির শেষ লাইন দুটি আজও মনের গহিনে গেঁথে আছে। গল্পের আত্মত্যাগী নায়ক ‘বড় মিঞা’র মৃত্যুতে কথকের মুখে উচ্চারিত হয়েছিল এক অসামান্য পঙ্ক্তি: ‘দুনিয়ার দফতরে যারা মানুষের নাম লিখে রাখে, তাদের নজরে তুমি পড়বে না জানি। কিন্তু আলেমুল গায়েব যদি কেউ থেকে থাকে, তবে তার দফতরে তোমার কীর্তি নিশ্চয় সোনার হরফে লেখা হয়ে থাকবে।’ এ বাক্য দুটি যেন আজ সেই গল্পের শব্দের সীমা অতিক্রম করে এক জীবন্ত সত্য হয়ে উঠেছে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর প্রসঙ্গে। আমাদের প্রতিদিনের নিষ্প্রভ জীবনচর্যায় ইতিহাসচর্চা যখন বীরত্ব ও আত্মত্যাগকে ভুলে থাকতে শেখায়, তখন তার মতো একজন আত্মপ্রত্যয়ী দুঃসাহসী শিক্ষক আমাদের মনে করিয়ে দেন, কিছু কিছু নাম সরকারি দপ্তরের খাতায় না উঠলেও মানবতার অন্তর্লিখিত ইতিহাসে ও সমসাময়িক মানুষের স্মৃতিতে চিরন্তন হয়ে থাকেন, সোনার হরফে লেখা হয়ে থাকে তাদের নাম।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এক গভীর উপলব্ধি থেকে বলেছিলেন, ‘যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মায় না।’ এ কথাটি নিছক কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যবেক্ষণ নয়; বরং আমাদের জাতিগত মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক দৈন্যের এক নির্মম প্রতিবিম্ব। আজ আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে অযোগ্যতা, সুবিধাবাদিতা আর দুর্বৃত্তায়নই যেন হয়ে উঠেছে সাফল্যের মানদণ্ড। অথচ আত্মনিবেদিত, সৎ ও আদর্শবান মানুষের কণামাত্র স্বীকৃতিও দেওয়া হয় না। তারা নীরবে হারিয়ে যান বিস্মৃতির অতলে। মাহেরীন চৌধুরীর মতো নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের আত্মত্যাগ তাই কেবল একটি মর্মন্তুদ দুর্ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার নয়। বরং তা দেশের জন্য এক গভীর নৈতিক চ্যালেঞ্জ; যা একটি জাতিকে তার বিবেকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।

নিঃসন্দেহে মাহেরীন চৌধুরী এক অবিস্মরণীয় মুখ, এক মহৎ ব্যক্তিত্ব ও অনন্য শিক্ষক। ২১ জুলাইয়ের সেই তপ্ত দুপুরে দগ্ধ হওয়া মাইলস্টোনের বিভীষিকাময় মৃত্যুপুরীতে মায়ের মমতায় ও শিক্ষকের কর্তব্যনিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে নিজের জীবনকে বাজি রেখেছিলেন তিনি। আগুনের লেলিহান শিখা যখন গ্রাস করছিল ভবনভর্তি কোমলমতি শিশুদের অনাগত দিনের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে, তখন যেন হতবিহ্বল সময় থমকে দাঁড়িয়েছিল। শ্বাসরুদ্ধকর আতঙ্কে যখন চারপাশ এলোমেলো, সবাই যখন নিজ নিজ জীবন বাঁচাতে ছুটছে, তখন সেই মুহূর্তে এক ‘মা’ শিক্ষক আগুনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন তার ‘বাচ্চা’ শিক্ষার্থীদের রক্ষায়। মাহেরীন চৌধুরী কেবল একজন শিক্ষকই ছিলেন না, তিনি শিক্ষকতার অন্তর্নিহিত অর্থকে জীবন দিয়ে অর্থবহ করে গেছেন। আগুনের মুখে দাঁড়িয়ে তিনি একে একে বিশের অধিক আটকেপড়া শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেন এবং শেষ পর্যন্ত নিজেই আটকা পড়েন ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে জ্ঞান হারান। উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও মৃতের দেশে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অচিরে তিনিও যোগ দিলেন। এই আত্মোৎসর্গ নিছক বীরত্বের প্রদর্শন নয়, এটি একজন শিক্ষকের পেশাগত ও নৈতিক দায়বদ্ধতা এবং মানবিক মমত্ববোধের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

মাহেরীন চৌধুরীর এ আত্মোৎসর্গ কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া তাৎক্ষণিক সাহসিকতার প্রকাশ নয়; বরং এটি ছিল দীর্ঘ সময় ধরে তার চেতনায় নির্মিত এক অটল বিশ্বাস, পেশাগত নৈতিকতা ও গভীর আত্মপ্রত্যয়ের নীরব প্রশিক্ষণ থেকে উৎসারিত। একজন শিক্ষক হিসাবে তিনি শুধু পাঠদানের মাধ্যমে নয়, বরং জীবনের প্রতিটি দিন ছাত্রছাত্রীদের জন্য যেভাবে দায়িত্বশীলতা ও মমতার আদর্শ স্থাপন করে গেছেন, তা-ই তাকে দিয়েছিল অনন্য শিক্ষকের গৌরব। প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তার পেশাগত প্রতিশ্রুতি ও মানবিকতা যেভাবে প্রতিভাত হয়েছে, তা কোনো রূপকথার গল্প নয়; বরং বাস্তবতার নির্মমতা ভেদ করে সেটি আমাদের মনে উঁকি দেয় এক অসাধারণ শিক্ষকের নৈতিক শক্তির প্রতিচ্ছবি হয়ে। আগুনের লেলিহান শিখা দেখে যখন অন্যরা নিজেদের রক্ষায় প্রাণপণ ছুটছিলেন, তখন মাহেরীন চৌধুরী ছোট শিক্ষার্থীদের হাত ধরে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন নিজের জীবনবাজি রেখে। ওই মুহূর্তে তিনি কেবল একজন শিক্ষক ছিলেন না, তিনি হয়ে উঠেছিলেন আশ্রয়, সাহস, ভালোবাসা ও করুণার মূর্ত প্রতীক। তার চোখে ছিল না আতঙ্কের ছাপ, ছিল মাতৃস্নেহের দৃঢ়তা ও ভালোবাসার আকুতি; তার কণ্ঠে ছিল না আর্তনাদ, ছিল দায়িত্বের দায়ভার। সেটা ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে একজন শিক্ষক হয়ে ওঠেন অভিভাবক, বীরযোদ্ধা ও মুক্তির আশ্বাস।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন