স্পষ্টভাষী, জেদি, সফল। সম্ভবত এই তিনটি শব্দই বাংলাদেশের জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলারকে সবচেয়ে ভালোভাবে বর্ণনা করে। মার্চ ২০২৪-এ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই ইংরেজ কোচ হয়তো বিভিন্ন মহলে কিছুটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, কিন্তু তিনি সাফল্য এনে দিয়েছেন এবং এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি ফুটবল ফেডারেশনকে দেখিয়েছেন কীভাবে ক্রমাগত উন্নতি করা যায় এবং আরও বড় লক্ষ্য অর্জন করা যায়। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে খোলামেলা সাক্ষাৎকারে সাবেক ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডার তার ফুটবল পদ্ধতি, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, ফেডারেশনের দুর্বলতা, পুরুষ ফুটবল এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিতর্ক নিয়ে কথা বলেছেন। এটি দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশ:
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪, এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ার্স এবং সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ – তিনটি টুর্নামেন্ট, তিনটি ট্রফি। আমরা কি আগামী দুই মাসে আরও দুটি আশা করতে পারি?
পিটার বাটলার: আমি বলব যে ট্রফি জয়ের চেয়েও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমি একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছি। দলটির একটি ঝাঁকুনি দরকার ছিল। দীর্ঘদিন ধরে এটি ছিল একটি কপি-পেস্ট নির্বাচন পদ্ধতি, যেখানে খেলোয়াড়রা প্রায় নিজেদেরই নির্বাচিত করত। তাদেরকে ঘাটানোর জন্য বলছি না – বলছি শুধু পরিস্থিতি স্থবির হয়ে গিয়েছিল। আমি নতুন মুখ আনতে চেয়েছিলাম এবং খেলোয়াড়দের আবার তাদের জায়গার জন্য লড়াই করতে দেখতে চেয়েছিলাম। এটি তাদের কম্ফোর্ট জোন থেকে বের করে আনার ব্যাপার।
কিন্তু দলটি ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল এবং ভালো ফুটবল খেলেই জিতেছিল।
পিটার বাটলার: তারা জিতেছিল, কিন্তু এরপর কী হয়েছিল, বিপর্যয় নেমে এসেছিলো। দলটি বড় ব্যবধানে হারেছিল, তাদের কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনাও ছিল না। প্রায় এক বছর ধরে কিছুই এগোচ্ছিল না। আমি এই কাজটি নেওয়ার আগে যখন গবেষণা করছিলাম, তখন সিস্টেমে বড় ধরনের ফাটল লক্ষ্য করি। কিছু খেলোয়াড় তাদের ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। এর অর্থ এই নয় যে তাদের কোনো মূল্য ছিল না, তবে মূল খেলোয়াড় এবং প্রভাব সৃষ্টিকারী খেলোয়াড়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমার দর্শন সহজ: প্রতিযোগিতা তৈরি করা, উচ্চ গতি এবং তীব্রতার ফুটবল খেলা। কিন্তু এর জন্য ফিটনেস প্রয়োজন। আর অনেক খেলোয়াড়ই এতে ভুগছিল।
আপনি শুরু থেকেই ফিটনেস ও খাবারের ওপর জোর দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রগুলোতে আপনি ঠিক কী করেছেন?
পিটার বাটলার: আমি কখনই কঠোর খাদ্যতালিকা চাপিয়ে দিইনি। আমি যা করেছি তা হলো দায়িত্ববোধ তৈরি করেছি – ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং কতটা খাব তার নিয়ন্ত্রণ। উদাহরণস্বরূপ, দিনে তিনবার ভাত খাওয়ার পরিবর্তে হয়তো একবার বা ছোট অংশে দুবার কমানো। এটি সচেতনতার ব্যাপার। আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, নিয়ম নয়। যদি আপনি রাত ১০টায় টেকওয়ে পিজ্জা অর্ডার করেন, তাহলে সেটা পেশাদার ক্রীড়াবিদের আচরণ নয়। আমি এই বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিয়েছিলাম কারণ এগুলো নির্বাচনে প্রভাব ফেলে। যদি কেউ ৯০ মিনিট খেলতে না পারে, তাহলে সেটা একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায় – বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, যেখানে আপনি শীর্ষ ৫০ র্যাঙ্কিংয়ের দলের মুখোমুখি হচ্ছেন। আধুনিক ফুটবলে অ্যাথলেটের প্রয়োজন। যদি আপনি তেমন একজন না হন, তবে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
শোনা যায়, আপনার আসার আগে পল স্মলি খেলোয়াড়দের জন্য সঠিক ডায়েট চার্ট চালু করেছিলেন।
পিটার বাটলার: আমি জানি না। আমি স্মলি সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাই না, তবে স্মলি মূলত অনেক কিছু ভুল করেছিলেন। আমি নিশ্চিত যে তিনি অনেক কিছু ঠিকও করেছিলেন। কিন্তু যখন ডায়েটের কথা আসে, যখন তারা যে খাবার খাচ্ছিল তার কথা আসে, তখন তা ছিল ভয়াবহ। মোটেও পুষ্টিকর ছিল না। এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে প্রেসিডেন্টের কল্যাণে।
যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, মাছ দুর্দান্ত – প্রোটিন বেশি। প্রচুর পরিমাণে রুটি ও পরোটা? তেমন ভালো নয়। পরিমিত পরিমাণে সেদ্ধ ভাত? ভালো। চর্বিহীন মাংস, কম চর্বি, কম ভাজা খাবার। এটাই মূল বার্তা। এটি ছোট তবে বুদ্ধিমান পরিবর্তন আনার ব্যাপার। আপনি এখনও স্থানীয় খাবার খেতে পারেন – তবে সচেতনতার সঙ্গে।
বাসস্থানের অবস্থা কেমন?
পিটার বাটলার: থাকার অবস্থা এখনও ভয়াবহ। আমি এত খারাপ সুযোগ-সুবিধায় কোনো ফুটবল দলকে রাখা দেখিনি। এটা অমানবিক।
কিন্তু মিডিয়া যখন ঠিক আপনার কথাগুলোই লেখে, তখন বাফুফে তাদের নিন্দা করে।
পিটার বাটলার: এটাই সত্যি কথা। এবং সৌভাগ্যবশত, প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে একমত। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পের জন্য হোটেলে থাকার অনুমোদন দিয়েছেন যাতে মেয়েদের বাফুফে ডর্মসে ফিরে যেতে না হয়। কিন্তু কিছু লোক এখনও পুরনো ব্যবস্থা ধরে রাখতে চায় কারণ এটি তাদের জন্য সুবিধাজনক। আমি পরিবর্তনের জন্য চাপ দিয়ে যাব – শুধু মহিলা দলের জন্য নয়, কমলাপুর এলিট একাডেমি – ছেলেদের একাডেমি – এর মতো জায়গার জন্যও, যা খুব খারাপ অবস্থায় আছে।