গণক্ষমতাবিরোধী ধ্যানধারণা বনাম গণরাজনৈতিক ধারা

প্রথম আলো ফরহাদ মজহার প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৫, ১৩:৪৯

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর প্রতিনিধিত্ববাদী ক্ষমতা ও শাসনকাঠামোর মধ্যেই বিকল্প খোঁজার চেষ্টা আসলে জনগণের ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া।


‘নাগরিক সমাজ’ বারবার ব্যবহৃত হয়েছে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই নাগরিক সমাজ বলতে বোঝানো হচ্ছে মূলত এনজিওকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত প্রতিনিধিকাঠামো।


বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার একটি প্রত্যক্ষ প্রকাশ ঘটিয়ে সবাইকে বিস্মিত করে। আমরা সবাই তা প্রত্যক্ষ করেছি। এই অভ্যুত্থান নিছকই একটি রাজনৈতিক সরকার পতনের ঘটনা ছিল না, বরং ছিল একটি মৌলিক গঠনতান্ত্রিক মুহূর্ত। যেখানে জনগণ বিদ্যমান রাষ্ট্রিক শৃঙ্খলার বাইরে নিজস্ব সার্বভৌম ক্ষমতার প্রকাশ ঘটিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে ঐতিহাসিকভাবে প্রস্তুত।


কিন্তু বিদ্যমান সংবিধানের অধীন উপদেষ্টা সরকারকে শপথ পাঠ করিয়ে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবের মধ্য দিয়ে পুরোনো রাষ্ট্রব্যবস্থাই বহাল রাখা হয়। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের কোনো ঘোষণাও (প্রক্লেমেশন) দিতে দেওয়া হয়নি। সমাজের অভিজাত শ্রেণির নেতৃত্বে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করে গণ–অভ্যুত্থানকে তথাকথিত সংস্কারের শূন্যগর্ভ আলোচনায় পর্যবসিত করা হয়।


পরবর্তী সময় নানা বুদ্ধিজীবী, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার মধ্য দিয়ে একধরনের জুলাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্যবিরোধী আদর্শিক প্রতিক্রিয়া ও বয়ান তৈরি শুরু হয়ে যায়, যার লক্ষ্য এই অভ্যুত্থানকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার’ ও ‘ধাপে ধাপে পরিবর্তন’-এর মধ্যে সংকুচিত করে ফেলা। অর্থাৎ সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবের পক্ষে বয়ান তৈরির কাজও শুরু হয়ে যায়।


জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শ ও চাওয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বয়ান তৈরির উদাহরণ হিসেবে আমরা ১৬ জুন যৌথভাবে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও প্রথম আলো আয়োজিত ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শিরোনামে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করতে পারি। এই গোলটেবিল বিষয়ে প্রথম আলোর যথার্থ শিরোনাম, ‘প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরে যেতে হবে’।



লক্ষণীয় যে জুলাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও আদর্শবিরোধী সংস্কারবাদী রাজনীতি গঠনতান্ত্রিক রূপান্তরের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অস্বীকার করে। এমনকি তারা রাষ্ট্রের সংস্কারও চায় না। তারা শুধু চায় বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার। আলী রীয়াজের ভাষায়, ‘আসল কাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করানো, কার্যকর করা। দ্বিতীয় হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সম্মিলিত শক্তির একটা সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা করা। এটা এখনকার যেসব রাজনৈতিক শক্তি আছে, তাদের মাধ্যমে করার সম্ভাবনা আমি প্রায় দেখি না।’


আলী রীয়াজ বিদ্যমান লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির প্রতিনিধিদের সংগঠনকেই ‘রাজনৈতিক দল’ গণ্য করেন এবং জনগণের শক্তি শুধু তাদের মধ্যেই নিহিত রয়েছে, এটা অনুমান করেন। উপদেষ্টা সরকারের কার্যকলাপও গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবিপ্লবী ধারণা ধারণ করে বলে লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক দল গণ্য করে।


গণ-অভ্যুত্থান লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির নেতৃত্বে হয়নি। আলী রীয়াজসহ উপদেষ্টা সরকারের চিন্তায় জনগণ অনুপস্থিত। ফলে দেখা যায়, অসচেতনতা–দোষে অথবা সজ্ঞানেই প্রতিবিপ্লবী (সংস্কারবাদী) বয়ান কীভাবে ‘জনগণ’কে রাজনৈতিক চিন্তাচেতনার কেন্দ্রীয় অবস্থান থেকে চ্যুত করে। আর সেখানে লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির প্রতিনিধিদের প্রতিস্থাপিত করা হয়।


এরপর জনগণের সার্বভৌম কতৃত্বকে প্রতিষ্ঠাননির্ভর সংস্কারের নামে প্রতিস্থাপিত করে কার্যত জনগণের গণতান্ত্রিক গাঠনিক ক্ষমতাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়। অথচ যে ক্ষমতার শক্তি আমরা গত ৫ আগস্ট দেখেছি এবং উপদেষ্টা সরকার তার ফলভোগীমাত্র।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও