কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আর কতদিন

বণিক বার্তা মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২৫, ০৯:৩০

প্রতি বছর বাজেট এলে কালো টাকা সাদা করা নিয়ে আলাপ-আলোচনা দেখা যায়। শুরুতে সুযোগ না দেয়ার হুমকি-ধমকি থাকলেও কেন জানি শেষ মুহূর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়ে যায়। এটা গত কয়েক দশকেরই নিয়মিত চিত্র। কালো টাকার ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত তা নিয়ে বাস্তবসম্মত পলিসির অভাব আমরা দেখে আসছি। অন্তর্বর্তী সরকার অনেক ব্যাপারে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও কালো টাকার ব্যাপারে পুরনো পথেই রয়ে গেল।


যে টাকার আয় ও আয়ের উৎস ঘোষণা না দিয়ে রাষ্ট্রের প্রাপ্য কর ফাঁকি দেয়া হয় বা যায়, যে টাকা অবৈধভাবে অর্জিত, সে টাকাই কালো টাকা। এ কালো টাকাই যেকোনো অর্থনীতিতে আয়বৈষম্য, প্রতারণা, বঞ্চনা, অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ব্যত্যয়ের প্রমাণক, অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি ও ন্যায়নীতি নির্ভরতাহীনতারই সূচক এবং অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তির পরিবর্তে বিচ্যুতির মাধ্যমে সমূহ ক্ষতি সাধনের প্রভাবক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষাপটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি নানা আঙ্গিকে বিচার বিশ্লেষণের অবকাশ উঠে আসে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নানা ব্যাখ্যার বাতাবরণে কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা রাখাটাই কালো নীতি এবং এ ব্যাখ্যার মারপ্যাঁচের মধ্যে কালো টাকার মালিক এবং কর ‘আদায়’কারী কালো টাকা সাদা করার নামে তাদের আয়-উপার্জনকে আরো কালো করার পথে পা বাড়ায়।


কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা মতভেদ থাকলেও এর যথা বিধি-ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সামাজিক অর্থনীতি তথা রাষ্ট্রের এখতিয়ার। সরকার পরিচালিত রাজনৈতিক অর্থনীতি বা নির্বাহী বিভাগের নয়। কেননা কালো টাকা তো সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি; স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ন্যায়-নীতির জায়গায় ব্যর্থতার প্রতিফল। সাম্প্রতিক নজির থেকে দেখা যায়, তুলনামূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠার পর হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, ইরান, নিকারাগুয়া, বলিভিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠতে পেরেছে। এসব দেশ প্রথম পর্বে কালো টাকাকে মূল স্রোতে নিয়ে আসতে সাদা করার সুযোগ দিত। পরবর্তী সময় শক্ত হাতে কালো টাকা সৃষ্টির উৎস বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় প্রতিবিধান জোরদার করার ফলে সেসব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে চমকপ্রদ গতিসঞ্চার হয়েছে। আরো খোলাসা করে বলা যায়, যেমন সুহার্তোর ১৯৬৫-৯৮ সালের ৩৩ বছরের শাসনকে ইন্দোনেশিয়ার উন্নয়নতত্ত্বে¡‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ আখ্যায়িত হতো। গত দুই দশকে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি কমিয়ে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হওয়ায় ইন্দোনেশিয়ায় অর্থবহ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বা হচ্ছে।



ভারতের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) পর্যবেক্ষণ অনুসারে বলা যায় সামান্য কিছু অর্থ দুর্নীতিবাজরা ১০-১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করে নিলে ওই বৈধকরণের নথিপত্রগুলো তাদের হাজার হাজার কোটি কালো টাকা নিরাপদে রেখে দেয়ার ভালো দালিলিক সুরক্ষা দিতে পারে। ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে কালো টাকা আড়াল করার ভালো ব্যবস্থার সুবাদে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জনের মানেই হলো একটা সুনির্দিষ্ট সমঝোতা-নেটওয়ার্কের সহায়তায় দুর্নীতিবাজরা নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সমর্থ হচ্ছে। এটি দৃশ্যত দুর্নীতিবাজদের জন্য সম্ভাব্য দুর্নীতি দমনের জাল থেকে পলায়নের পথ খুলে দেয়ার শামিল। এ ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে কালো টাকার মালিকদের সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে যে এ সুবিধা নিলে তাদের দুর্নীতিকে দমন করা হবে না।


কালো টাকাকে কর প্রদানের সময় ’অপ্রদর্শিত অর্থ’ সংজ্ঞায়িত করে গুরুতর অপরাধটিকে হালকা করার প্রয়াস দেখা যায় যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশের সংবিধানের ২০(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসেবে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না’। সংবিধানের এ বিধানমতে ‘অনুপার্জিত আয়’ যদি কালো টাকা হয় তাহলে কালো টাকার সংজ্ঞা ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ এবং এ সংজ্ঞা দুর্নীতির সঙ্গে কালো টাকার যে ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে সেটাকে অনেকটাই গৌণ বা লঘু করে দিচ্ছে কিনা সেটাও পরীক্ষা পর্যালোচনার অবকাশ থেকে যায়।


তবে এটা অনস্বীকার্য যে অনেক সময় বৈধভাবে অর্জিত অর্থের ওপর যেমন জমিজমা, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট, দোকান ইত্যাদি রিয়েল এস্টেট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রকৃত দাম না দেখিয়ে কম দাম দেখালে রেজিস্ট্রেশন খরচ, স্ট্যাম্প খরচ, সম্পদ কর ও ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে কালো টাকাকে ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ বলাই সংগত এবং তা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়া যেতে পারে, তবে কোনো অবস্থাতেই বিদ্যমান কর-হার হ্রাস করে নয়, উপরন্তু জরিমানা দিয়ে তো বটেই এবং কোনো অবস্থাতেই কোনো সংস্থা তাকে প্রশ্ন করতে পারবে না এ ধরনের অ্যামনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমা দিয়ে নয়। প্রসঙ্গত, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০০৮) প্রযোজ্য করসহ বছরপ্রতি ১০ শতাংশ হারে (সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ) জরিমানা দিয়ে এ জাতীয় অপ্রদর্শিত আয় ’প্রদর্শন’ বা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সময় শেষ হওয়ার পর যাদের কাছে অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা পাওয়া যেত তাদের বিরুদ্ধে আয়কর আইনেই জেল-জরিমানার ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছিল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও