You have reached your daily news limit

Please log in to continue


আশ্চর্য, যাদের জন্য আমরা টিকে আছি, তাদেরই টিকে থাকাই দায়!

“নীলাম্বরী-শাড়ি পরি’ নীল যমুনায় কে যায়?”–নজরুলগীতি। সত্তর ভাগ জলের এই পৃথিবীটাই যেন নীল একটা শাড়ি পরে আছে। এজন্য পৃথিবী শব্দের একটা প্রতিশব্দ ‘সাগরবসনা’, আরেকটা ‘সাগরনেমি’, নেমি শব্দের অর্থ চাকার বেষ্টনী বা বেড়। আবার পদার্থবিদ্যা থেকে জেনেছি সমুদ্রের উপর সূর্যের চেয়ে চাঁদের আকর্ষণ বেশি, কারণ চাঁদ পৃথিবীর কাছাকাছি। তাই সমুদ্রে যে জোয়ার-ভাটা হয় তা প্রধানত চাঁদের প্রভাবেই হয়। এজন্য, চন্দ্রোদয়ে যে ক্লিন্ন হয় অর্থাৎ চাঁদ উঠলে যে ভিজে যায়, প্রাচীন অভিধানে তাকে বলা হচ্ছে সমুদ্র।

স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেছিলেন, “আমি কেবল সমুদ্রের তীরে খেলাধুলা করা একটি ছেলের মতো এবং মাঝে মাঝে নিজেকে কিছু ঝকঝকে নুড়িপাথর বা মধ্যম সৌন্দর্যের ঝিনুক খুঁজে বের করার মধ্যে ডুবিয়ে রাখছি, যেখানে সত্যের বিশাল সমুদ্র আমার সামনে অনাবিষ্কৃত অবস্থায় পড়ে আছে।” নিজের অর্জিত জ্ঞানের সামান্যতা বোঝাতে তিনি তাকে অসীম মহাসাগরের অজানা জ্ঞানের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কথাটা বিনয়সূচক ও রূপকার্থে হলেও আজকের বিজ্ঞানও সে কথা বলছে; সমুদ্রবিজ্ঞানের উদাহরণ দেখা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে ৯০ শতাংশেরও বেশি সামুদ্রিক জৈব প্রজাতি এখনও নথিভুক্ত (documented) করা সম্ভব হয়নি, এদের মধ্যে মাছ এবং ক্রাস্টেসিয়ান থেকে শুরু করে মাইক্রোবিয়াল আর্কিয়া এবং গভীর সমুদ্রের স্পঞ্জ রয়েছে। পৃথিবীর চূড়ান্ত সীমানা সমুদ্র হল অজানা জীববিজ্ঞানের একটি রাজ্য, যেখানে প্রতিটি ডুব পাঠ্যপুস্তক পুনর্লিখনের জীবরূপ প্রকাশ করে।

সমুদ্র-প্রাণিজগতের যে দশ ভাগ সম্বন্ধে মানুষ জানতে পেরেছে, তা ইতোমধ্যে মানবজাতির জন্য বিস্ময়কর বিবিধ কল্যাণ বয়ে এনেছে। অ্যারেনিকোলা মেরিনা (Arenicola marina) একটি সামুদ্রিক কীট যা সাধারণত লাগওয়ার্ম (lugworm) বা ব্লো লাগওয়ার্ম (blow lugworm) নামে পরিচিত এবং সৈকতের যেখানে জোয়ার-ভাটার পানি আসা যাওয়া করে এমন বালুকাময় বা কর্দমাক্ত জায়গায় ইউ (U)-আকৃতির গর্তে বাস করে। লাগওয়ার্ম এক ধরনের অ্যানিলিড (annelid), দেখতে কিছুটা এদেশের ফেরেটিমা প্রজাতির কেঁচোর মত (তবে কেঁচো নয়), ১০-২৫ সেন্টিমিটার লম্বা, গোলাপী, বাদামী বা কালো রঙের হতে পারে। বিজ্ঞানীদের চোখে ধরা পড়ে যে লাগওয়ার্মের হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা মানুষের হিমোগ্লোবিনের চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বেশি। এই জ্ঞান তারা কাজে লাগান অঙ্গ প্রতিস্থাপনের (organ transplant) অপারেশনে। দেহের যে কোন কোষ (cell) বা টিস্যুর বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। মানবদেহে অক্সিজেন ছাড়া ব্রেইন কোষ ৪ থেকে ৬ মিনিট, হার্ট কোষ ১৫-২০ মিনিট, কিডনি কোষ ২-৩ ঘণ্টার বেশি বেঁচে থাকতে পারে না। কোষে কোষে অক্সিজেন পরিবহন ও সরবরাহের গুরত্বপূর্ণ কাজটা করে থাকে রক্তের হিমোগ্লোবিন। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপনের আগ পর্যন্ত অঙ্গদাতা (donor)-এর অঙ্গ (যেমন কিডনি, লিভার, হার্ট ইত্যাদি) টিকিয়ে রাখা, কারণ মধ্যবর্তী সময়ে অক্সিজেন স্বল্পতার ফলে কোষের প্রভূত ক্ষতি হয়ে যায়, যাকে ischemia-reperfusion injury (IRI) বলে। মধ্যবর্তী সময়ে অঙ্গ সংরক্ষণের জন্য সাধারণত শীতলকরণ (cooling) এবং UW (University of Wisconsin Solution) দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। শীতলকরণ পদ্ধতিতে দাতার অঙ্গ জীবাণুমুক্ত বরফের একটি ব্যাগে (অথবা 0-4°C তাপমাত্রায় কোল্ড স্টোরেজে) সংরক্ষণ করা হয়। এভাবে কিডনি (উদাহরণত) সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু এতে ৪০-৬০শতাংশ কোষের ক্ষতি সাধিত হয়, ফলে প্রায় ৫০শতাংশ কিডনিই ব্যবহার উপযোগী থাকে না, ফেলে দিতে হয়। আর UW দ্রবণে অঙ্গ ডুবিয়ে তারপর 4°C তাপমাত্রায় ফ্রিজে রাখা হয়। এভাবে কিডনি সর্বোচ্চ ৩৬ ঘণ্টা সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু এরই মধ্যে ২০-৩০ শতাংশ কোষের ক্ষতি হয়ে যায়, ফলে প্রায় ১০-৩০ শতাংশ কিডনি ব্যবহার উপযোগী থাকে না। দুটি পদ্ধতিই বিপাক ধীর করে দেয় এবং ফোলা/অ্যাসিডোসিস প্রতিরোধ করে। কিন্তু অক্সিজেন সরবরাহ করে না–যেজন্য ধীরে ধীরে অঙ্গগুলোর দম বন্ধ হয়ে আসে। অপরদিকে, UW দ্রবণ বা বিশেষায়িত বাফারের মত সংরক্ষণ দ্রবণে যদি লাগওয়ার্ম হিমোগ্লোবিন (Hemo2Life বা M101 নামে পরিচিত) যোগ করা হয় তবে কিডনি/লিভার দীর্ঘসময় (৫০ ঘণ্টার বেশি) বেঁচে থাকে, ১০ শতাংশের কম কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কারণ গ১০১ অক্সিজেন সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখে, বিষাক্ত মুক্ত-র‍্যাডিক্যাল তৈরি করে না বা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ট্রিগার করে না; আখেরে দাতার কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

জেরোম হ্যামন নামক একজন ফরাসি নিউরোফাইব্রোমাটোসিস টাইপ ১ (NF1) থেকে মুখমণ্ডলের বিকৃতিতে ভুগছিলেন, যা একটি জেনেটিক ব্যাধি। প্রথমে ২০১০ সালে ফ্রান্সেই তার আংশিক মুখ প্রতিস্থাপন (নিচের চোখের পাতা, নাক, ঠোঁট) করা হয়। কিন্তু ৮ বছর পর ওই গ্রাফ্ট তার শরীর প্রত্যাখ্যান করে। জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতা দেখা দেয়, তিনি সঠিকভাবে খেতে, কথা বলতে বা চোখের পলক ফেলতে পারছিলেন না। ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বারের মত তার মুখ প্রতিস্থাপন করা হয়; এবারে ফরাসী চিকিৎসক লরেন্ট ল্যান্টেরি (জর্জেস পম্পিডো হাসপাতাল, প্যারিস) দাতার মুখ সংরক্ষণে M101 ব্যবহার করেন। মুখটি একজন ব্রেন-ডেড দাতার কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং প্রতিস্থাপনের আগে M101 দ্রবণে তা ২৪ ঘণ্টার বেশি সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে। অভূতপূর্ব সফলতা অর্জিত হয়, রোগীর মুখের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার হয় (চোখের পলক ফেলা, কথা বলা ইত্যাদি)। প্রমাণিত হয় যে সামুদ্রিক হিমোগ্লোবিন (M101) অত্যন্ত জটিল রক্তনালী সমৃদ্ধ অঙ্গ (vascularized graft) দীর্ঘসময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে সক্ষম। এই ঐতিহাসিক আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পথ প্রশস্ত করে। ২০১৯-২০২০ ফ্রান্সে ডা. ফ্রাঁসোয়া কেরবাউল কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রথমবারের মত M101ব্যবহার করে সফলতা অর্জন করেন। ২০২১ সালে ভারতের কোচির অমৃতা হাসপাতালের সার্জন ডা. সুব্রামানিয়া আইয়ার প্রথম দুই অগ্রবাহু (কনুই এবং কব্জির মাঝখানে) প্রতিস্থাপন করেন। ৩৪ বছর বয়সী একজন পুরুষ সড়ক দুর্ঘটনায় তার দুই অগ্রবাহু হারিয়েছিলেন। ব্রেইন ডেড দাতার বাহু M101-এ ৪৮ ঘণ্টার বেশি সংরক্ষিত ছিল। রোগী কয়েক মাসের মধ্যে মুঠিবদ্ধ করার শক্তি এবং সংবেদন ফিরে পান এবং ধীরে ধীরে উভয় বাহুরই কার্যকারিতা ফিরে পান। কিছু প্রিক্লিনিক্যাল ব্রেকথ্রুও অর্জিত হয়েছে। ২০২১ সালে জার্মানিতে M101-এ সংরক্ষিত শুকরের লিভার, ২০২২ সালে ফ্রান্সে ইঁদুরের হৃদপিণ্ড কয়েক গুণ বেশি সময় বেঁচে থেকেছে এবং মানবদেহে M101 দিয়ে সংরক্ষিত লিভার, হার্ট প্রতিস্থাপনের পথ সুগম করেছে।

ভারতবর্ষীয় পৌরানিক কাহিনিতে সমুদ্রমন্থনের মাধ্যমে সর্বরোগের মহৌষধ আবিষ্কারের ঘটনা রয়েছে। অসুরদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভের লক্ষ্যে দেবতাগণ ঠিক করেন যে তারা সমুদ্রমন্থনের মাধ্যমে অমৃত সংগ্রহ করবেন। ক্ষীরসাগরে সমুদ্রমন্থনের প্রক্রিয়ায় মন্দার পর্বত মন্থনদণ্ড হিসাবে এবং শিবের স্কন্ধসঙ্গী নাগরাজ বাসুকী মন্থনরজ্জু হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সমুদ্রমন্থনের ফলে ক্ষীরসাগর থেকে বিবিধ রত্ন, দৈবপশু, দেবী, চন্দ্র, ধন্বন্তরী ইত্যাদি উত্থিত হয়। ধন্বন্তরী হলেন দেবতাদের চিকিৎসক। সমুদ্রমন্থনের একেবারে শেষে এই ধন্বন্তরী অমরত্বের পীযূষ স্বরূপ একটি অমৃতের ভাণ্ড নিয়ে উত্থিত হন। অমৃত পান করে দেবতারা অমরত্ব লাভ করেন এবং অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হন। বাস্তবে অমরত্বের ওষুধের সন্ধান পাওয়া না গেলেও সামুদ্রিক জীবজগৎ থেকে বেশ কিছু যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন:

১. জিকোনোটাইড (Ziconotide): দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উপশম করে। উৎস: শঙ্কু শামুক Cone snail (Conus magus)-এর বিষ। প্রক্রিয়া: স্নায়ুতে N-টাইপ ক্যালসিয়াম চ্যানেলগুলোকে ব্লক করে। ওপিওয়েড (Opioid)-এর মত আসক্তি তৈরি করে না, তীব্র দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার জন্য জীবন রক্ষাকারী (যেমন, ক্যান্সার, এইচআইভি রোগীদের)।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন