ঈদে টানা ১০ দিনের লম্বা ছুটি। তাই বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ নানা মাধ্যমে বাড়ির পানে ছুটছেন নগরবাসী। গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর, বাস টার্মিনাল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এবং কমলাপুর রেলস্টেশনসহ সবখানেই ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এসব স্টেশনে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়সহ আছে নানা অভিযোগ। আবার অনেকে বলছেন, এবারের ব্যবস্থাপনা অন্যবারের চেয়ে ভালো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা। পুলিশ, আনসারের পাশাপাশি নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন সেনাসদস্যরাও। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগে উত্তরায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ায় গতি কমছে গাড়ির। কিছু স্থানে যানজট তৈরি হচ্ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে গাড়িগুলো বাস টার্মিনালে আসতে পারছে না। ফলে ফিরতি যাত্রায় বিলম্ব হচ্ছে। টার্মিনালে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চগুলো। পন্টুন থেকে লঞ্চ সর্বত্র মানুষ আর মানুষ। যাত্রীরা বলছেন, এবার ঈদ উপলক্ষ্যে লম্বা ছুটি যা ঈদ আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে সবচেয়ে স্বস্তির যাত্রা ট্রেনে। কমলাপুর থেকে ঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে প্রায় সব ট্রেন। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট যাত্রীরা। বিকালের পর চাপ বাড়ে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে। এবারও শতভাগ টিকিট অনলাইনে হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন অনেকেই। যাত্রীদের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্টেশনে তিন স্তরের চেকিং ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাসে যাত্রার চিত্র একটু ভিন্ন। রাজধানী থেকে উত্তরাঞ্চলের বাসগুলো সময়মতো ছাড়লেও পথে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় চাপ। বিশেষত বিকালে পোশাক কারখানা ছুটির পর গাজীপুর চন্দ্রায় তৈরি হয় যানজট। ঢাকা, টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এতে চন্দ্রাসহ কয়েকটি স্থানে তৈরি হয়েছে জটলা। বরাবরের মতোই আছে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ।
গাবতলী বাস টার্মিনাল : সরকারি ছুটি শুরুর আগের দিনে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আগের ২ দিনের তুলনায় এদিন সকাল থেকে কাউন্টারগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল। সরেজমিন গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে-সকাল থেকে যাত্রী বোঝাই বাস ঢাকা ছাড়ছে। কাউন্টারের সামনে লোকজন সিরিয়াল দিয়ে টিকিট কাটছেন। আবার অনেকে টিকিট কেটে বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে রয়েছেন। এ দিন যাত্রীচাপ বেশি থাকায় মিরপুর ১ নম্বর টেকনিক্যাল থেকে আমিন বাজার ব্রিজ পর্যন্ত যানজট ছিল। তবে অফিস ছুটির পর লোকজনের চাপ আরও বেড়েছে। অনেক কোম্পানি বেশি ভাড়া নিয়েছে। এদিন ৫০০ টাকার টিকিট ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে কাউন্টারের লোকজন বলছেন সরকার নির্ধারিত মূল্যে তারা টিকিট বিক্রি করছেন। ঢাকা রাজবাড়ি রুটের রাবেয়া পরিবহণের যাত্রী মোনালিসা বলেন, সকালে কাউন্টারে এসে টিকিট কিনতে চাইলে ৫০০ টাকার টিকিট ২০০ টাকা বেশি দাম চাওয়া হয়। অভিযোগটি বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে জানালে ম্যাজিস্ট্রেট কাউন্টারে এসে তাদের সতর্ক করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে কাউন্টারের লোকজন কয়েক ঘণ্টা টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখেন। তাদের সঙ্গে একই রুটের নদীয়া, এমএম ও সৌহার্দ পরিবহণের লোকজনও টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখে। এতে টিকিটের জন্য যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। রাবেয়া পরিবহণের স্টাফ লিমন বলেন, বুধবার দুপুরের পর ঢাকা-রাজবাড়ি রুটের সব বাসের টিকিট বিক্রি বন্ধ। সকালে একটু ঝামেলা হয়েছে। কি ঝামেলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখার কর্মচারী জসিম বলেন ঈদের ছুটিতে তিনি রাজশাহী সদরে যাবেন। অফিসে হাজিরা দিয়ে দুপুরের দিকে তিনি গাবতলীতে এসেছেন। বাসের জন্য প্রায় ঘণ্টা খানেক কাউন্টারে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন গাবতলীতে এসেই টিকিট পেয়েছি। টিকিট কাটার সময় কাউন্টারের লোকজন বলেছেন ২টায় গাড়ি ছাড়বে। এখন ৩টার কাছাকাছি। তিনি বলেন কাউন্টারের লোকজন জানিয়েছে গাড়ি জ্যামে আটকা পড়েছে তাই দেরি হচ্ছে। গাবতলীতে ডিউটিরত বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত ০৯-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাসমিয়া বলেন, কেউ যেন টিকিটের দাম বেশি না রাখে এজন্য সতর্ক করা হয়। তবে কাউকে জরিমানা করা হয়নি।