সংস্কার নিয়ে সবক ও শঙ্কা

প্রথম আলো মহিউদ্দিন আহমদ প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৪১

অন্তর্বর্তী রাজনীতি এখন দ্রুত একটা অবয়ব নিতে যাচ্ছে। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলছে। বিএনপির নেতারা কয়েক দফায় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। সংবাদমাধ্যমে জানতে পারলাম, কিছু বিষয়ে তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। একটি প্রস্তাব ছিল, কেউ টানা দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। আরেকটি প্রস্তাব হলো একই ব্যক্তি দলের শীর্ষ নেতা, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। বিএনপির এতে ঘোর আপত্তি।


প্রথমে বলা দরকার, এই প্রস্তাব কেন এল। এটা তো আসমান থেকে টুপ করে পড়েনি। তার একটা পরিপ্রেক্ষিত আছে। আমরা নিকট অতীতে দেখেছি, কেউ একবার ক্ষমতা হাতে পেলে আর ছাড়তে চান না। ছলে–বলে–কৌশলে সেটি ধরে রাখতে চান। ফলে আমরা দেখেছি, একের পর এক তামাশার নির্বাচন, প্রধান বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন এবং মানুষকে জিম্মি করে ভয়াবহ সন্ত্রাস। এর তো একটা শেষ হতে হবে।


দুনিয়ায় আমরা তো একমাত্র রাষ্ট্র নই। আরও দেশ আছে। সেসব দেশেও আমরা দীর্ঘকাল ‘নির্বাচিত’ স্বৈরশাসন দেখেছি। উদাহরণ হিসেবে আমরা ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, মিসর, জিম্বাবুয়ের নাম বলতে পারি। এসব দেশে নামকাওয়াস্তে নির্বাচন হতো। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট প্রতিবারই বিপুল ভোটে ‘নির্বাচিত’ হতেন। এসবের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ভীষণ। সেসব দেশে গণ-অভ্যুত্থানে কিংবা সেনা-অভ্যুত্থানে সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। সেখান থেকে মানুষ শিক্ষা নিয়েছে। ফিলিপাইন আর দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ সংবিধানে এমন একটি ধারা ঢুকিয়েছে যে কেউ এক মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন না। ফলে ওই সব দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বেগবান হয়েছে।



বিএনপি নেতারা দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছেন। কেন দিয়েছেন তা তাঁরা জানেন, আমরাও বুঝি। কিন্তু মুখে তাঁরা এটি বলবেন না। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গলায় প্রায়ই শুনতাম, রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশে নাকি স্থিতিশীলতা আসে না, উন্নয়ন হয় না। এর অর্থ হলো, তিনিই ক্ষমতায় থাকবেন ধারাবাহিকভাবে। তাঁর অনুচর আর চাটুকারেরা বলাবলি করত, দেশে যত উন্নয়ন হচ্ছে, এসবই তাঁর অবদান।


উন্নয়ন যে সরকারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে, ব্যক্তির মর্জির ওপর নয়; উন্নয়নের খরচ আসে জনসাধারণের ট্যাক্সের টাকায়, নেতার পকেট থেকে আসে না—এটা তাদের কে বোঝাবে। আসলে এটা হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। এক জমিদার একটা পুকুর কাটালেন, স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেন বা রাস্তা বানালেন। প্রজারা খুশিতে ডুগডুগি বাজাল, আমাদের জমিদার কত মহানুভব। কিন্তু তিনি নায়েব, গোমস্তা, লাঠিয়াল দিয়ে কী পরিমাণ খাজনা আদায় করলেন, কতজনকে ভিটাছাড়া করলেন, সেটি নজরে পড়ে না।


বিএনপি এক ব্যক্তিকে সামনে রেখেই এসব প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে বলে মনে হয়। দলনেতা, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী যদি তিনজন আলাদা ব্যক্তি হন, তাহলে বিএনপির সমস্যা কী? অসুবিধা একটা আছে। হয় দলের সর্বময় কর্তৃত্বের মালিকের এই ইচ্ছা, অথবা এটি এমন একটি দল, যেখানে ন্যূনতম তিনজন নেতা নেই, যাঁরা এই তিনটি দায়িত্বে থাকতে পারেন। কেন একই ব্যক্তিকে দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে? দেশে আর যোগ্য লোক নেই? হ্যাঁ, বলতে পারেন, অন্যান্য সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে তো প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেওয়া নেই। অকাট্য যুক্তি।


কিন্তু আমাদের দেশটা কি ওই সব দেশের মতো? আমরা তো অনন্য! অন্যান্য দেশে আমাদের দেশের মতো জীবিত নেতার পূজা, মৃত নেতার কবরপূজা, নেতার পরিবারের পূজা হয় কি?


আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। বাহাত্তরের সংবিধান লেখা হয়েছিল এক ব্যক্তির মুখের দিকে চেয়ে। ফলে তিনি হয়ে যান সর্বময় কর্তা। মন্ত্রিসভা জাতীয় সংসদের কাছে নয়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়বদ্ধ করা হয়। এটা ছিল সংসদীয় ব্যবস্থার আঁতুড়ঘর যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার একটা বিকৃত রূপ। সেটিকে জায়েজ করার জন্য উঁচু গলায় বলা হতো, ‘আমরা বিদেশি ইজমে বিশ্বাস করি না; আমাদের আছে দেশের আলো-বাতাসে তৈরি নিজস্ব সিস্টেম!’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও