সন্‌জীদা খাতুন: এক দীপশিখার অবসান

বিডি নিউজ ২৪ বিভুরঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৫, ২০:১৮

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন আজ এক শূন্যতায় স্তব্ধ। ২৫ মার্চ ৩ টা ১০ মিনিটে ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রবীন্দ্রনাথের একনিষ্ঠ সাধক, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সন্‌জীদা খাতুন চলে গেছেন এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে।


খবরটি শুনে কেমন হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম। তাঁর সঙ্গে আমার খুব যোগাযোগ ছিল তা নয়। কিন্তু তিনি আছেন, এটাই তো ছিল অনেক বড় ভরসা।


তাঁর প্রস্থানে শুধু সংগীত কিংবা শিক্ষা নয়, বাঙালির চেতনাবোধের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি শুধু একজন শিক্ষক, গবেষক বা সংগঠক ছিলেন না— তিনি ছিলেন এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ, যিনি জীবনব্যাপী বাঙালির সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও রবীন্দ্রনাথকে একসূত্রে গেঁথে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।


আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর সরাসরি ছাত্র হওয়ার। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে তাঁকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি। সেই দিনগুলো এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে, যখন তিনি আমাদের ক্লাসে আসতেন রবীন্দ্রনাথের বিশাল ভুবনের দরজা খুলে দিতে। তিনি কোনো লেখার শুধু পাঠ কিংবা বিশ্লেষণ করতেন না; তিনি আমাদের শেখাতেন কীভাবে শব্দের গভীরে যেতে হয়, কীভাবে সাহিত্যের সৌন্দর্য শুধু বর্ণনায় নয়, তার অন্তর্নিহিত দর্শনে লুকিয়ে থাকে। তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের পঙক্তি নতুন মাত্রা পেত—


"কেন দূরে থাকি, ওগো বন্ধু, কাছে আসি, কাছে"— এই কথাগুলোর গভীরতা তিনি শুধু বোঝাতেন না, অনুভব করাতেন।



ছায়ানট এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ


বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জাগরণের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের মধ্য দিয়ে ছায়ানটের যাত্রা শুরু। সন্‌জীদা খাতুন ছিলেন এই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাণশক্তি। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সাংস্কৃতিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজ আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এই পথ সহজ ছিল না। ১৯৭১ সালের ভয়াবহ দুঃসময়ে যখন পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের সংস্কৃতির শেকড় উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল, তখনও ছায়ানটের সংগঠকরা নির্ভয়ে সামনে এগিয়েছিলেন। সন্‌জীদা খাতুন ছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য।


স্বাধীনতার পরও তিনি সংস্কৃতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কাজ করে গেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি জাতির স্বাধীনতা শুধু ভৌগোলিক সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়— সেটি তার ভাষা, সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পের মধ্য দিয়ে সত্যিকারের পরিচয় পায়। তাঁর কাছে সংস্কৃতি মানে ছিল আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি, যা একটি জাতিকে তার শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখে।


ব্যতিক্রমী পথপ্রদর্শক


শিক্ষক সন্‌জীদা খাতুন ছিলেন অনন্য। তাঁর পাঠদানে ছিল প্রাণের উচ্ছ্বাস, ছিল গভীর অন্তর্দৃষ্টি। তিনি শুধু বইয়ের পৃষ্ঠার মধ্যে আটকে থাকতেন না— শিক্ষার্থীদের ভাবনার জগৎ উন্মুক্ত করে দিতেন। তিনি চাইতেন, আমরা রবীন্দ্রনাথকে শুধু আবৃত্তি না করি, তাঁকে বুঝতে শিখি। তিনি বলতেন— "কবিতা শুধু চিত্র নয়, কবিতা শব্দের ভিতরে গড়ে ওঠা এক অনুভবের ভাস্কর্য।"


তাঁর ক্লাসে বসে মনে হতো, বাংলা সাহিত্য আর শুধুই সাহিত্য নেই— এটি আমাদের জীবন, আমাদের ইতিহাস, আমাদের অস্তিত্ব। তিনি কখনো পাঠ্যবইয়ের বাইরে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র পড়াতেন, কখনো নজরুলের বিদ্রোহী সত্তার ব্যাখ্যা দিতেন, কখনো বা জীবনানন্দের কাব্যে বাঙালির নিঃসঙ্গতাকে অনুধাবন করাতেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও