You have reached your daily news limit

Please log in to continue


দগ্ধ রাংটিয়া শালবন এবং দায়সারা রাষ্ট্র

ভাবা যায়, সাত দিন ধরে পুড়েছে রাংটিয়া শালবন। এলোপাতাড়ি এবং নির্মমভাবে। রাষ্ট্র তবু দায়িত্বহীন ও নিশ্চুপ। এটা কোনো কথা, কর্তৃত্ববাদী রেজিম নেই, কোনো ভাগবাটোয়ারা নেই। তাহলে কে বা কারা রাংটিয়া শালবন পুড়িয়ে দেয়ার বাহাদুরি করলো? মুনাফা আর দখলের প্রবল বাসনা ফেনাতে গিয়ে প্রাচীন এক ঝরাপাতার বনকে কারা ধর্ষণ করলো? শুধু রাংটিয়া নয়, এই মার্চের প্রথম সপ্তাহেই দিনাজপুরের সিংড়া শালবনেও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে শতাধিক গাছ।

বাংলাদেশের মিডিয়া যে কোনো ঘটনার খবর পরিবেশন বা ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে নানা ছল ও রাজনীতি করে। মিডিয়া হাউজের বাণিজ্য ও রাজনীতি সেখানে মুখ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু এই ঘটনার বয়ান ও বিবরণে প্রায় সকল মিডিয়ার উপস্থাপন মোটাদাগে ‘একইরকমের’। রাংটিয়া শালবনের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডকে মিডিয়া বলছে, ‘পরিকল্পিত আগুন’। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে দেশের এক অতি বিরল বাস্তুতন্ত্রের অধিকারী প্রাচীন নাজুক শালবনকে আগুন দিয়ে অঙ্গার করার ‘পরিকল্পনা’ কারা করে?

বাংলাদেশে প্রধানত তিন ধরণের শালবন বাস্তুতন্ত্র আছে। উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত শালবনগুলো বৃহৎ নদীপ্রণালী দ্বারা বিচ্ছিন্ন। শাল বা গজারি এসব বনের নির্দেশক প্রজাতি হলেও দেশের তিনপ্রান্তে বিস্তৃত শালবনের উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির ভিন্নতা আছে। বনের সাথে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পর্কও বৈচিত্র্যময়। মধুপুর ও ভাওয়াল শালবন সর্বাধিক পরিচিত এবং এসব বনে বনআলুর বৈচিত্র্য বেশি। ঠাকুরগাঁওয়ের ঠুমনিয়া, দিনাজপুরের সিংড়া, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা শালবনে লম্বাটে উঁচু উঁইঢিবি দেখা যায়। এছাড়া জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণার সীমান্তে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশের শালবনগুলো এশীয় হাতির অন্যতম বিচরণস্থল। পূর্বাঞ্চলের শালবনের ভেতর রাংটিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেঘালয় পাহাড়ের প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্রের কাছাকাছি এর অবস্থান। যেখানে বালফাকরামের মতো বিরল বনও রয়েছে। শেরপুরের ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী হালচাটি, গান্ধীগাঁও, গাজিনি, নকশি, দরবেশটিলাসহ বহু এলাকার কয়েক কিলোমিটার শালবন পুড়ে গেছে। রাংটিয়া বনের ওপর এমন নৃশংসতা সমকালে হয়নি। যদিও এই বনকে নানাভাবে দখল, হত্যা ও লুন্ঠনের ধারাবাহিকা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল।

শালবন কেটে রাষ্ট্র অবকাশকেন্দ্র ও পিকনিক স্পট করেছে, আগ্রাসী গাছের বাগান করেছে। রাংটিয়া শালবনের আদিবাসিন্দা কোচ, হাজং ও মান্দিদের নানাভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাইরে থেকে আসা বাঙালিরা নানাভাবে এই অরণ্য অঞ্চলে নিজেদের বসতিকে প্রবলভাবে প্রতিষ্ঠা করছে। পাহাড় ও ঝোরা (ছড়া) লন্ডভন্ড করে পাথর ও চীনামাটি উত্তোলনের কারণে এই সীমান্তবর্তী বন আজ মুমূর্ষু। আর এই রক্তাক্ত বনকে কেবল লুণ্ঠন আর দখলের জন্যই আজ অন্যায়ভাবে আগুন দেয়া হয়েছে। বনবিভাগ, প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, মন্ত্রণালয় কিংবা রাষ্ট্র নির্বিকার। মিডিয়া এখনো রাংটিয়া বন পোড়ানো প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের নাম প্রকাশ করেনি। অথচ বাংলাদেশের সাংবাদিকেরাই কত দুরূহ জটিল আয়নাঘর খুঁজে বের করেছেন। অথচ সুন্দরবন থেকে লাউয়াছড়া কিংবা রাংটিয়া; দেশের প্রাকৃতিক বনে কারা আগুন দেয় এটি কেউ খুঁজে বের করতে পারে না কেন?

পঁচিশ বার আগুনে পুড়ল সুন্দরবন। কয়েকবার লাউয়াছড়া। ভাওয়াল-মধুপুর-পাথারিয়া-রাজকান্দি ঝলসে গেল। মার্কিন কোম্পানির আগুনে-অত্যাচারে স্মরণকালের ভয়াবহ ইকোসাইড হলো মাগুরছড়ায়। একটি অগ্নিকাণ্ডের পদ্ধতিগত তদন্ত হয়নি। ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি। এভাবে একের পর এক প্রাকৃতিক বন আগুন দিয়ে ঝলসে দেয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র নীরব। নাগরিক প্রতিক্রিয়া নেই।রাজনৈতিক দলগুলোরও কেউ জোরালোভাবে দাঁড়ায়নি। বহু ঘটনার ভিড়ে আগুনে পোড়া বন এক-আধটু ছোট্ট সংবাদ হয়ে তারপর অতলে হারিয়ে যায়। রাংটিয়া শালবনের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে নির্বিকার বসে থাকবার কোনো জো নেই। রাষ্ট্র ও সরকারকে এর দায় নিতে হবে। জবাব দিতে হবে। কোনোভাবেই কোনো কর্তৃপক্ষ পাশ কাটিয়ে এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে পারবে না। আমরা আশা করব দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠিত হবে এবং পাশাপাশি আগ্রহী নাগরিকপক্ষকে নিয়ে রাষ্ট্র দ্রুত একটি সরেজমিন পরিদর্শনের ব্যবস্থা করবে। স্থানীয় বননির্ভর জনগোষ্ঠীসহ নাগরিক সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে রাংটিয়াসহ প্রাকৃতিক বনে অগ্নিকাণ্ড রোধে একটি জাতীয় রূপরেখা, নীতি ও নানামেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। রাংটিয়া শালবনের ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণে প্রতিবেশ ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বনতলসহ বনের প্রতিটি স্তর এবং অণুজীবসহ সকল উদ্ভিদ ও প্রাণিবৈচিত্র্যকে মূল্যায়ন করতে হবে। মাটি-পানিসহ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতিকে উল্লেখ করতে হবে। বুনো জেনেটিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর ক্ষয়ক্ষতিকেও সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃতিসহ হিসাবে আনতে হবে। ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের জন্য জনগোষ্ঠীনির্ভর বন ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে। রাংটিয়াসহ প্রাকৃতিক বনের সকল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে তাদের আইন ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। একইসাথে প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংসকারীদেরকে সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে বয়কট করার নাগরিক তৎপরতা অব্যাহত রাখাও জরুরি।

দশ মূলের বন রাংটিয়া

নানা রকমের শণ ঘাস রাংটিয়া শালবনের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। পাহাড়ি ঝরনার ধারে জন্মায় কাইশ্যা শণ, টান জায়গায় জন্মে উলু শণ। উলু শণ দিয়ে ঝাড় বানায়। চর জায়গায় হয় বিন্যা ছুবা। পাহাড়ে হয় বড় পাতা শণ এবং হারুঠেহা বন। হারুঠেহা বন এখন বিলুপ্ত। ঘর ছাইতে আগে ব্যবহৃত হত। দশমূলের জঙ্গল রাংটিয়া। দেশের খুব কম বনেই দশটি ভেষজ উদ্ভিদের দেখা মেলে, যার মূল বা শেকড় লোকায়ত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। শঙ্খ মূল, বিন্দু মূল, বেনামূল, তেওড়ি মূল, ঈশ্বরমূল, শতমূল, বিন্যা মূল। স্থানীয় হাজং, কোচ ও মান্দিরা এসব ভেষজ ব্যবহার করেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন