![](https://media.priyo.com/img/500x/https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/09/6556-67a7d4397ac15.jpg)
এ দূষণ রুখব আমি কেমন করে
শিরোনামটি নেওয়া হয়েছে কালজয়ী সাংস্কৃতিক ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতাউর রহমান রচিত, সুরারোপিত ও গীত ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’ গানের ছায়া অবলম্বনে। বাংলাদেশের অন্যতম কালচারাল আইকন, চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান তার ইতিহাস সৃষ্টিকারী ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় গানটি যথার্থভাবে ব্যবহার করেছেন। প্রতীকী ঢঙে এ গানে খাঁচাকে পরাধীনতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং খাঁচা ভাঙাকে দেখানো হয়েছে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষা হিসাবে।
মানুষ পাখি নয়, বারবার খাঁচা ভেঙে বের হয়ে এসেছে। ঔপনিবেশিক শক্তির খাঁচা, পরাধীনতার খাঁচা, একদলীয় স্বৈরশাসন এবং ফ্যাসিবাদী অপশক্তির খাঁচাসদৃশ পরাধীনতা ভেঙে বাংলাদেশের মানুষ মুক্ত পরিবেশে বারবার বের হয়েছে। মানুষের স্বাধীনচেতা মানসিকতা কিছুদিনের জন্য অবদমিত হলেও চিরদিনের জন্য খাঁচাবন্দি বা পরাধীন থাকতে পারে না। মানবসভ্যতার ইতিহাসে চির-পরাধীনতার কোনো নজির নেই। আছে মুক্তি ও স্বাধীনতার ইতিবৃত্ত। বিবেকবান মানুষ পশুও নয়, শিকলে তাকে আটকে রাখা যায় না। মানুষ বারবার শিকল ভেঙেও মুক্তি লাভ করেছে।
কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীন মানুষ এখন প্রবলভাবে দূষণের অদৃশ্য শৃঙ্খলকবলিত এবং দূষণের খাঁচায় আবদ্ধ। পরিবেশের দূষণ, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক দূষণ জিম্মি করে রেখেছে তাবৎ জনগোষ্ঠীকে। খান আতাউর রহমান, যিনি যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের অরাজকতা দেখে নির্মাণ করেছিলেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’ নামের সামাজিক-রাজনৈতিক অনাচারের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ প্রতিবাদের চলচ্চিত্র, বেঁচে থাকলে হয়তো সজোরে প্রশ্ন তুলতেন, এ দূষণ রুখব আমি কেমন করে?
প্রথমেই আসে পরিবেশগত দূষণের বিষয়। সন্তর্পণে আমরা এক নির্মম দূষণচক্রে বন্দি হয়ে পড়েছি। আমাদের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে বায়ুদূষিত শহরের তালিকায় নিয়মিতভাবেই শীর্ষস্থান অধিকার করছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুকনা মৌসুমে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ প্রতি বছর বেশি থাকে; কিন্তু এবারের শুকনা মৌসুমে বায়ুদূষণ অতীতের রেকর্ড ভাঙছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস শুকনা মৌসুম হিসাবে ধরা হয়। নভেম্বরে ঢাকার বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করে। সর্বশেষ নভেম্বরে বায়ুদূষণ ছিল আগের আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডিসেম্বরও বায়ুদূষণ ছিল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর সদ্য শেষ হওয়া জানুয়ারি মাসে বায়ুদূষণ আগের আট বছরকে ছাড়িয়ে গেছে। জানুয়ারি মাসের দূষণের এ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া গত ৯ বছরের (২০১৭ থেকে ২০২৫) বায়ুমান সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ক্যাপস প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
পরিবেশ বা বায়ুদূষণ কেবল ঢাকা বা বাংলাদেশেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এক মারাত্মক সমস্যা। বায়ুদূষণে শীর্ষস্থান দখলের জন্য নিয়মিত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশের তিন প্রধান শহর। মোটামুটিভাবে প্রথম আসনটি বাংলাদেশের ঢাকা, ভারতের দিল্লি কিংবা পাকিস্তানের লাহোরের কব্জায় থাকছে। বাতাসের মান সূচক (একিউআই) এ তিন শহরের ক্ষেত্রে এতটাই খারাপ ও নাজুক, বায়ুদূষণের শীর্ষস্থানটি সচরাচর অন্য কোনো শহর ছিনিয়ে নিতে পারছে না। কিংবা বলা যায়, বিশ্বের অন্য কোনো শহরই নিজের চরম অধঃপতন ও অবক্ষয় ঘটিয়ে বায়ুদূষণের শীর্ষস্থানটি পেতেও চায় না। আমরা কিন্তু লজ্জাজনক প্রথম স্থানটি অন্য কাউকে নিতেই দিচ্ছি না। অথচ মুঘল রাজধানীর উদ্যানময় ঢাকা, দিলওয়ালাদের শহর দিল্লি আর খানাপিনা-গজল-কাওয়ালির আড্ডা লাহোর দূষিত নয়, হওয়ার কথা ছিল রুচি, সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের শহর।
পরিবেশ দূষণের মতো রাজনৈতিক দূষণের ভূতও ভর করেছে দক্ষিণ এশিয়ায়। চলছে দূষিত কাজ-কারবার: দাদাগিরি, অপর দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ, নাক গলানো। এগুলো রাজনীতির শিষ্টাচার নয় মোটেই। দূষিত কাজ। যার কুপ্রভাব ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া খুবই ভয়াবহ এবং নানারূপ কাঙ্ক্ষিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার জন্মদাতা হয়ে সৃষ্টি করছে অস্থিতিশীলতা ও জনঅসন্তোষ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পরিবেশ দূষণ