বাংলাদেশের মেয়েরা আমাদের দুই দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট এনে দিয়েছেন। বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টে তাঁদের সাফল্যের পাল্লা আরও অনেক ভারী। গত বছর নেপালের কাঠমান্ডুর রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে নেপালের বিরুদ্ধে ঋতুপর্ণা চাকমার গোলটা চোখে লেগে আছে। ২-১ গোলে বাংলাদেশ জিতেছিল সেই ম্যাচটা।
পরপর দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়নের গৌরব আমাদের এনে দিয়েছেন নারী ফুটবলাররা। বাংলাদেশই বর্তমান সাফ চ্যাম্পিয়ন। ২০২৪ সালের অক্টোবরে দেশে ফেরে চ্যাম্পিয়নেরা, হুডখোলা বাসে করে তাদের নিয়ে আসা হয় বিমানবন্দর থেকে। সমস্ত দেশ আনন্দে ভাসতে থাকে।
এই ঋতুপর্ণা ক্যামেরার সামনে প্রথম আলোর স্টুডিওতে আমাকে বলেছেন, ‘আমার পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা নিয়ে কথা বলতে একেবারেই সংকোচ নেই। আমার বাবা মারা গেছেন। একমাত্র ভাই মারা গেছে দুর্ঘটনায়। এক বোন নিয়ে আমার নিঃসঙ্গ মা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।’
আপনারা অনেকেই ঋতুপর্ণা চাকমার মায়ের ছবি দেখেছিলেন। এক পর্ণকুটিরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঋতুপর্ণার মা। পরে তাদের একটা বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভাব কি গেছে ওই পরিবারের?
আপনারা জানেন, তবুও বারবার করে মনে করিয়ে দিতে চাই: এই মেয়েরা যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত, তখন তারা ফুটবল খেলতে স্কুলমাঠে আসত, কারণ ফুটবল খেললে দুটো বিস্কুট খেতে পাওয়া যায়, কখনো কখনো হয়তো সঙ্গে কলা থাকে। এদের অনেকেই শুধু একটুখানি খাওয়া পাওয়ার আশায় মাঠে আসত।
কতবার বলব, আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগের কথা। ২০১৫ সালে ময়মনসিংহের ধোবাউরার কলসিন্দুর গ্রামের ফুটবলার মেয়েদের ওপরে প্রথম আলো একটা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে। আজকের সানজিদা, মারিয়া, শামসুন নাহাররা তখন অনেক ছোট। অনূর্ধ্ব ১৪। ওরা সারা দিন শুটিং করে। ওদের এই পরিশ্রম দেখে প্রথম আলোর প্রতিনিধি ওদের বলেন, ‘তোমরা অনেক কষ্ট করলে। আমাদের কাছে কিছু চাও।’ওরা জবাব দেয়, ‘আমাদের একবেলা পেট ভরে ভাত খাওয়ান।’উত্তরে আমরা বলি, ‘তোমরা আরও বেশি কিছু চাও।’ মেয়েরা এবার বলে, ‘তাহলে আমাদের পেটভরে ভাত খাওয়ান। আর আরও কিছু খাবার আমাদের দিয়ে দেন। আমরা বাড়িতে নিয়ে যাব। আমাদের ভাইবোনেরা খাবে।’