যোদ্ধার হাত যখন ভিক্ষার হাত
যোদ্ধা ও ভিক্ষুকের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব এবং চরিত্র নিয়ে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি অসাধারণ লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটি নানা কারণেই একটা বড় চিন্তার বিষয় হয়ে পড়েছে। যদিও এসব কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এমন তুলনামূলক বিশ্লেষণ কখনোই সেভাবে আসেনি। বাঙালি জাতি ঐতিহাসিকভাবেই যুদ্ধের বিষয়ে ভীত। কারণ, যুদ্ধের ইতিহাসে তারা সব সময়ই পরাজয় বরণ করেছে অথবা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ পলাশীর যুদ্ধে সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয় এবং তারও আগে কলকাতায় এক লাখ সৈনিক নিয়ে যুদ্ধ করার সময় ক্লাইভের মুষ্টিমেয় সৈন্যের কাছে পরাজিত হয়ে আলীনগরের সন্ধি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরও আগে রাজা লক্ষ্মণ সেন মুষ্টিমেয় তুর্কি অশ্বারোহীর কাছে পরাজয় বরণ করে পালিয়ে গিয়েছেন।
ফকির মজনু শাহ্ বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের পরেও পরাজিত হয়েছিলেন। এ পরাজয়গুলোর কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, নেতৃত্বের কোন্দল, আপসকামিতা, বিশ্বাসঘাতকতাসহ নানা উপাদান রয়েছে। তাই এই অঞ্চলে যে রাজনৈতিক দলগুলো গড়ে উঠেছে, তারা যুদ্ধের বিপরীতে আপসের নীতি গ্রহণ করেছিল। এসবের বিরুদ্ধে যদিও নেতাজি সুভাষ বসু যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছিলেন, কিন্তু আপসকামীদের কাছে তিনি বিজয়ী হতে পারেননি। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা দেশ শাসনে অপারগ হয়ে একের পর এক সামরিক শক্তিকে ব্যবহার করেছে এবং শেষ পর্যন্ত সেই আপসকামী বাঙালি যুদ্ধের পথই বেছে নিয়েছিল। যুদ্ধে বিজয়ীও হয়েছে। বলতে পারি সেটাই হচ্ছে বাঙালির প্রথম বিজয়। এ যুদ্ধের বিরুদ্ধেও আবার বাঙালিদের একটি বড় অংশ নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।