শ্বেতপত্রের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনীতি কি বাধা

প্রথম আলো ড. বুলবুল সিদ্দিকী প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৩৪

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের একটি রূপরেখা দিয়েছে। শ্বেতপত্র কমিটি দুর্নীতির যে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে, তা আমাদের জন্য যেমন হতাশার, তেমনি এই শ্বেতপত্রের সংস্কার প্রস্তাবগুলো সবার মধ্যে একটি আশার সঞ্চারও করেছে।


শ্বেতপত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাতটি প্রধান খাতকে চিহ্নিত করা হয়, যেখানে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ জরুরি। সেগুলো হলো অর্থনীতির মধ্যে স্থিরতা নিয়ে আসা; আসন্ন ২০২৫ এবং ২৬ সালের বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি পরিষ্কার ধারণা তৈরি করা; ২০২৫ থেকে ২৭ সালকে বিবেচনায় নিয়ে একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং এর সঙ্গে সম্প্রতি স্থগিত হয়ে যাওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যথাযথ মূল্যায়ন করা; অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারপ্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ খাতকে চিহ্নিত করা; স্বল্পোন্নত দেশে থেকে অধিকতর উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য শক্তিশালী নীতিমালা গ্রহণ; এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া; উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সংলাপের জন্য একটি ফোরাম তৈরি করা।


এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের জন্য এই শ্বেতপত্রের নির্দেশিত পদক্ষেপগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভঙ্গুর অর্থনীতির প্রভাব কেমন হতে পারে—এই দেশের প্রতিটি মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। সর্বস্তরের মানুষ নানাভাবে এই ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বলি হিসেবে জীবন যাপন করে আসছে।


এই শ্বেতপত্রে সংস্কারপ্রক্রিয়ায় যে বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের মধ্যে যে কাঠামোগত বাধা রয়েছে তা থেকে উত্তরণ। এটি দেশের সুশাসন ও অর্থনীতির একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরির জন্য অত্যাবশ্যক। অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে নেওয়া বিভিন্ন সংস্কারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই কমিশন সংস্কারের জন্য আরও ছয়টি খাতকে চিহ্নিত করে—ব্যাংক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, রাজস্ব, অবৈধ অর্থ পাচার, রাষ্ট্রীয় খরচ, বিশেষ করে উন্নয়ন প্রকল্প এবং সামগ্রিক তথ্য ব্যবস্থাপনা। 



এসব বাস্তবায়নের জন্য বৃহৎ এবং শক্তিশালী একটি প্রায়োগিক ও সমন্বিত রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। গুরুত্ব বিচারে অর্থনৈতিক সব সংস্কার প্রস্তাব সত্যিকার অর্থেই আমাদের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।


কিন্তু প্রশ্ন হলো এই সংস্কার এবং প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার কতটা প্রস্তুত কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো এই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে কতটা বদ্ধপরিকর এবং অতীত রাজনৈতিক চর্চা আমাদের তেমন ইঙ্গিত দেয় কি? কীভাবে পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার এই প্রস্তাবগুলোকে তার রাজনৈতিক ইশতেহারের সঙ্গে সমন্বিত করে বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা হাতে নেয়? সেই বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে জানা প্রয়োজন। 


রাজনৈতিক দলগুলোর জনবন্ধু হয়ে ওঠার ভান না করে; বরং গণমানুষের জন্য বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার এটাই যথাযথ সময়। রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের অতীত কর্মকাণ্ড থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে, তাহলেই সংস্কারের লক্ষ্যমাত্রা কেবল কমিশন প্রণীত সুপারিশমালাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সত্যিকারের ভূমিকা পালন করবে।


এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য ধারাবাহিক সংলাপের ব্যবস্থা করা, যাতে তাদের এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। এই প্রক্রিয়া তাদের অংশীদারত্ব বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সংস্কার বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।


প্রতিহিংসার রাজনীতির ভুক্তভোগী হিসেবে সাধারণ মানুষ বরাবরই সামনের কাতারে থাকে। প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে রাজনৈতিক দলগুলো সরে আসবে বলে আমি মনে করি। প্রতিহিংসার রাজনীতির জবাব রাজনৈতিক দলগুলো যেন দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেওয়ার একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে—সেই প্রত্যাশা থাকবে।


রাজনৈতিক দলগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বাস্তবসম্মত ও দৃশ্যমান কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে, যা সাধারণ মানুষকে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশান্বিত করতে পারে। যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারমূল্য সহনীয় ও নিয়ন্ত্রিত রাখা, জনগণের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও