পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা কেন গুরুত্বপূর্ণ

প্রথম আলো মিল্লাত হোসেন প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:১৩

বিচার-কর্ম বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় থেকে উঠেছে। এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের সময়ে এই সচিবালয় প্রতিষ্ঠার তোড়জোড় হয়ে এমনকি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পরও সরকারের অনীহায় তার বাস্তবায়ন ঘটানো না গেলেও সেই ভিত্তিপ্রস্তর আজও রয়ে গেছে। এরপর সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাও চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন।


পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি আদতে বিচার বিভাগের পৃথক্‌করণ ও স্বাধীনতারই একটি ধাপ। পৃথক্‌করণ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো নিছক আলংকারিক বাগ্মিতা বা কথার কথা নয়, এগুলো এ ভূখণ্ডের ধারাবাহিক রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁর অভিভাষণে এ লক্ষ্যে এক রোডম্যাপও ঘোষণা করেছিলেন। এরই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি হয়েছে।


রাজনৈতিক অঙ্গীকার


১৯২১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার আইনসভায় নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথক্‌করণ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ১৫ নম্বর দফা ছিল বিচার বিভাগের পৃথক্‌করণ। এই দফার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে একটি আইনও পাস হয়, যদিও কেবল একটি গেজেট নোটিফিকেশনের অভাবে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।


১৯৭০–এর যে নির্বাচনের ফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে, তাতে বিজয়ী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক করা। ১৯৭২ সালের সংবিধানের অন্যতম ম্যান্ডেট ঘোষণা করা হয় বিচার বিভাগের পৃথক্‌করণকে। ১৯৯০–এর গণ–অভ্যুত্থানের পর তিন জোটের রূপরেখার ৩(খ) দফায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়।



সর্বশেষ ২০২৪–এর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া তাঁর প্রথম ভাষণেও বিচার বিভাগের সংস্কারকে সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি বলে অভিহিত করেছেন। ফলে বিচার বিভাগের পৃথক্‌করণকে আমাদের একটি শতাব্দীপ্রাচীন রাজনৈতিক অঙ্গীকার বলা যায়।


সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা


সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণকে রাষ্ট্রপরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া সংবিধানের ৪র্থ তফসিলের অন্তর্গত ‘অন্তর্বর্তীকালীন ও সাময়িক বিধানাবলি’র দফা ৬(৬) অনুযায়ী অধস্তন আদালত–সম্পর্কিত সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগের ২য় পরিচ্ছেদের অর্থাৎ বিচার-কর্ম বিভাগ ও স্বাধীনতা–সংক্রান্ত বিধানাবলি যথাশিগগির সম্ভব বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া ১১৫, ১১৬ ও ১১৬ক অনুচ্ছেদগুলোতে এমন কিছু বিশেষ বিধান রয়েছে যেগুলোর বাস্তবায়নের সঙ্গে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।


এমন নিরঙ্কুশ জন-অভিপ্রায় আর তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রণীত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার সম্মিলিত প্রকাশ ঘটেছিল মাসদার হোসেন মামলার রায়ে। যার ফলে বিচার বিভাগের পৃথক্‌করণের প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর। মামলার আদেশের ৭ম দফায় বিচার বিভাগের ওপর সুপ্রিম কোর্টের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা ও ৮ম দফায় আইনসভা ও সরকারের প্রভাববলয় থেকে মুক্ত করে বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের রাজনৈতিক প্রত্যয় আর শাসনতান্ত্রিক ম্যান্ডেট প্রতিপালনের জন্য সরকার বা নির্বাহী বিভাগের আওতা থেকে বের করে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান প্রধান বিচারপতির ঘোষিত রোডম্যাপ বা রূপরেখার প্রধান ধাপ ছিল সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন।


রাজনৈতিক অভিপ্রায় ও সাংবিধানিক প্রত্যাদেশ ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপনের আরও নানাবিধ বাস্তব কারণ আছে। সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা হাইকোর্ট বিভাগের ওপর ন্যস্ত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও