আমরা নানা মতবাদে বিভক্ত হয়ে রয়েছি

www.ajkerpatrika.com মামুনুর রশীদ প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:১৭

গত শতাব্দীর ষাটের দশক ছিল আমাদের স্বপ্নের দশক। ওই দশকেই আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলাম এবং সব ক্ষেত্রেই সংস্কারের প্রয়োজন গভীরভাবে উপলব্ধ হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বঞ্চনা, সোনার বাংলাকে শ্মশান করার ষড়যন্ত্র, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমাদের শিল্প-সাহিত্যও সেভাবেই আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কবি, সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও রাজনীতিবিদ—সবাই একসঙ্গে অনুভব করেছিলেন বাঙালির একটি জাতিরাষ্ট্র প্রয়োজন।


আন্দোলনের জোয়ার তখন সারা দেশে। মুসলিম লীগ সরকার একের পর এক আন্দোলনের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। সামরিক শাসন ছাড়া তাদের দেশ রক্ষার আর কোনো উপায় ছিল না। এই সামরিক জান্তা পরবর্তীকালে ২৫ মার্চ রাতে স্বদেশের নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ষাটের দশকে পাকিস্তানের একজন বিচারপতি (সম্ভবত বিচারপতি কায়ানি) বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম প্রাউড অব মাই আর্মি হু হ্যাভ কনকোয়ার্ড দেয়ার মাদারল্যান্ড।’ সবকিছুর মূলে ছিল একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা, সচ্ছল জীবন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মিলেমিশে সুখে থাকা। কিন্তু একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সেই জায়গা থেকে আমরা সরে এসেছি।


আমরা যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে ছিলাম, আমাদের সংকটটা আরও বেশি ছিল। যুদ্ধের প্রান্তরে সহযোদ্ধারা যেভাবে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, সেই সব কথা মনে হলে আমরা শিহরিত হই। গুলিবিদ্ধ এক যোদ্ধা কামানের সামনে টিকতে পারছেন না, অন্য যোদ্ধারা তাঁকে সরে আসতে বলছেন, কিন্তু তিনি গান গাইতে গাইতে মৃত্যুকে মেনে নিলেন। এমনই অনেক ঘটনা মুক্তিযুদ্ধে ঘটেছে। বাংকারে বসে অনেক যোদ্ধার স্বপ্নের কথা শুনেছি এবং সবটা মিলিয়ে যা মনে হয়েছে, তা হলো দেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশ হবে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র। সংবিধানে সেই জন্যই ঠাঁই পেয়েছিল সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র—এইসব কথা। এরপর সেই সংবিধান নানাভাবে কর্তিত হয়ে অন্য একটা চেহারা নিয়েছে।



এবারে সংবিধান সংস্কারে ধর্মনিরপেক্ষতার কথাটি বাদই পড়ে যাচ্ছে। সমাজতন্ত্র তো আগেই বাদ পড়েছে। রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায় প্রবল ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বাজার নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা— সবটাতে এই প্রবল দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। আমলাতন্ত্র গণমানুষের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে তাদের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থায় নিয়ে গেছে। কোনো দেশপ্রেমিক দক্ষ বিশেষজ্ঞের সুদূরপ্রসারী কোনো ভাবনাকে রাষ্ট্রের কাজে লাগানোর কোনো সুযোগ ছিল না। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদদের পরিকল্পনা কমিশনে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। তখনকার অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের পরামর্শকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করেছিলেন। আমলারা কালক্রমে সেসব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়। উপজেলা থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বস্তরে আমলারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে। জনপ্রতিনিধিরা আমলাতন্ত্রের শক্তির কাছে নিতান্তই দুর্বল বলে তাঁরা আমলাদের সুপারিশ মতোই কাজ করে থাকেন। কিন্তু আবার তাঁদের অসৎ উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার জন্য একটা যোগসাজশের সৃষ্টি হয়। জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য কোনো সুব্যবস্থা জনপ্রতিনিধি ও আমলারা সৃষ্টি করেনি। যেহেতু দীর্ঘ দীর্ঘ সময় সংসদ অকার্যকর থেকেছে, তাই জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের বক্তব্য জাতির সামনে হাজির করতে পারেননি। যার ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মাঝে মাঝে বিঘ্নিত হয়েছে এবং নির্বাচনগুলোতে তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখা গেছে।


যেকোনো দেশের মানুষের সর্বশেষ আশ্রয় বিচারব্যবস্থা। বিচারব্যবস্থাও নিরপেক্ষভাবে কখনোই কাজ করতে পারেনি। এটা একটা দুর্ভাগ্য। আইনজীবীরা বিভক্ত এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাই তাঁদের প্রধান কাজ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা নয়। এই সমস্যা নিম্ন আদালত থেকে একেবারে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত বিস্তৃত। যেকোনো দেশে নাগরিকদের একটা ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটাবার কোনো সুযোগ এই রাষ্ট্রে নেই। যেহেতু জনপ্রতিনিধিরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আসেন না, তাই জনগণের প্রতি তাঁদের জবাবদিহির কোনো প্রয়োজনই মনে করেন না। নিজেদের স্বার্থেই তাঁরা ব্যস্ত থাকেন। সরকারি দায়িত্ব এবং ক্ষমতাকে নিজের কাজেই ব্যবহার করেন।


আমাদের দেশে পেশাদার রাজনীতিবিদদের সংখ্যাও বেশ কম। কমিউনিস্ট পার্টিতে এবং সমাজতান্ত্রিক দলগুলোতে সার্বক্ষণিক নেতা ও কর্মীরা কাজ করতেন। সেই জন্য পার্টি থেকে একটা ভাতাও পেতেন। পার্টির এই খরচ সংকুলান করতে গণচাঁদার ব্যবস্থা ছিল। যে চাঁদার পরিমাণ চার আনা থেকে এক টাকা। কিছু গণতান্ত্রিক দলেও এই রকম গণচাঁদার ব্যবস্থা অনেক দিন পর্যন্ত ছিল। এখন আর সেই চাঁদার ব্যবস্থা নেই বরং রাজনীতিবিদদের বিত্ত গড়ে তোলার জন্য লাখ-কোটি টাকার চাঁদার ব্যবস্থা হয়েছে। এই চাঁদা আবার রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার জন্য।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও