পর্যটন বিকাশে নেই মহাপরিকল্পনা
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। সমুদ্রের মাতাল করা গর্জন আর ঢেউয়ে কার মন না দোলে। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এটি হতে পারেনি বিদেশি পর্যটকদের তীর্থস্থান। সুযোগ ছিল ব্রাজিলের প্রায়া ডো ক্যাসিনোর মতো অতি আকর্ষণীয় হওয়ার।
কিংবা অস্ট্রেলিয়ার নাইনটি মাইল বিচের আদলে সেভেনটিফাইভ মাইল বিচ। ৭৫ মাইল বা ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের মধ্যে মাত্র চার কিলোমিটার সৈকতের সৌন্দর্যে যারপরনাই উৎসবমুখর দেশি পর্যটকরা। অথচ পাহাড় আর সমুদ্রের মিতালিতে সৃষ্ট নৈসর্গিক দৃশ্যপট ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে সমগ্র পৃথিবীর পর্যটকদের তীর্থস্থান হতে পারে কক্সবাজার। বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনায় ঘুরে যেতে পারে সামগ্রিক অর্থনীতির চাকা।
শুধু সমুদ্রসৈকত নয়, পর্যটকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে সমুদ্রের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া দ্বীপ। সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে পর্যটকদের অল্পস্বল্প মিতালি গড়ে উঠলেও বাকি তিনটি যেন একেবারেই অচেনা। সমুদ্র থেকে খুবই কাছে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক ম্যানগ্রোভ বন। আছে ঐতিহাসিক স্থাপনা আর বহুবৈচিত্র্যের জাতিগোষ্ঠীর বসতি।
সব মিলিয়ে প্রকৃতি যে অপার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুড়িয়ে দিয়েছে কক্সবাজারকে, তা পৃথিবীতে বিরল। তবে মহাপরিকল্পনার অভাবে সৌন্দর্যের সিকিভাগও প্রস্ফুটিত হয়নি, যেন অন্ধকারের অতলেই পড়ে আছে প্রকৃতির রূপরস।
অতি প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পদে পরিপূর্ণ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতায় পর্যটনে পিছিয়ে পড়েছে পুরো জেলা। দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত কোনো মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো অপরিকল্পিত সৈকত ব্যবস্থাপনা, নতুন বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অনীহা, বিদেশি পর্যটকদের অনাগ্রহ, পরিকল্পিত বিনোদনব্যবস্থা না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে এই পর্যটননগরী।