তিন গভর্নর যেভাবে ব্যাংক খাতে অনিয়মের সহযোগী হয়ে ওঠেন
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় ব্যাংক খাতের সংস্কার সাধন। কারণ, আগের সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এই খাতের। সে জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ব্যাংক খাতকে কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাকহোল) সঙ্গে তুলনা করেছে। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ এখন ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। খাতটি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থার সহায়তায় ব্যাংক দখল হয়েছে। একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতেই সাতটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয়। এই সুযোগে বড় অঙ্কের অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়।
দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক খাতে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা গভর্নরের হাতে। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদেরও চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতা নেওয়ার দিনে গভর্নর ছিলেন বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল তাঁর মেয়াদ শেষ হলে নতুন গভর্নর হন আতিউর রহমান। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার পরে তিনি পদত্যাগ করেন। তাঁর সময়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে নতুন ব্যাংক অনুমোদন ও ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা দিয়ে বিতর্কিত হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০১৬ সালে সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবির গভর্নর হলে একের পর এক ব্যাংক দখল হতে থাকে। এসব ব্যাংকে নির্বিচার লুটপাট শুরু করে দখলকারীরা। নতুন ব্যাংক অনুমোদন ও ঋণ নীতিমালায় ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণ গোপন করার কৌশলও দেখা যায় তাঁর সময়ে। ২০২২ সালে গভর্নর পদে বসানো হয় আরেক সাবেক অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদারকে। তাঁর আমলেও আগের ধারা অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয় লুটপাট হওয়া ব্যাংকগুলোকে। এসব টাকাও ঋণের নামে বের হয়ে যায়। এভাবে লুটপাটের সহযোগী হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে আব্দুর রউফ তালুকদার লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান এবং পদত্যাগ করেন।