সুষ্ঠু নির্বাচনই মূল এজেন্ডা হয়ে উঠেছে

যুগান্তর ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৫

বর্তমান অবস্থায় আমাদের দেশে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিত্বের সংশ্লিষ্টতা নেই। কারণ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সব সদস্যই অরাজনৈতিক ব্যক্তি; রাজনীতির ময়দানে কোনোদিন তাদের পদচারণা ছিল না। তাছাড়া কয়েকজন ছাত্র বা সবেমাত্র ছাত্রত্ব ঘুচিয়েছেন, এমন ব্যক্তিও সরকার পরিচালনায় সম্পৃক্ত আছেন। এ অবস্থায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপদ্ধতিও কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী বলে মনে হচ্ছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ফসল হিসাবে ক্ষমতা গ্রহণের পর এ পাঁচ মাসে সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা সংস্কার কার্যক্রমের যে পথে তারা অগ্রসর হয়েছেন, তাতে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক নীতি বা কমিটমেন্ট অনুসরণ করা হয়েছে বলে মনে হয় না। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সংলাপ করে দেশ পরিচালনায় অগ্রসর হলেও তারা রাজনীতিবিদদের কোনো ফরমুলা গ্রহণ করছেন বা করেছেন, এমনটি নয়। আর বর্তমান সরকার অরাজনৈতিক বিধায় তাদের কোনো রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকার কথাও নয়।


এ অবস্থায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে একাগ্রচিত্তে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রচেষ্টার মাধ্যমে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছেন, তাতে তিনি কতটা সার্থক সে বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো হয়নি। তবে এ ক’মাসে দেশের অর্থনীতির যে চালচিত্র এবং সেখানে যেসব ক্ষত দেখতে পাওয়া গেছে, তাতে আগামী সময়ে সহসা যে সেসব ক্ষত তিনি মেরামত করতে পারবেন না, সে কথাটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। যদিও একজন অর্থনীতিবিদ হিসাবে সারা বিশ্বে তার সুনাম থাকায় এবং তিনি একজন নোবেল লরিয়েট হওয়ায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে দেশের জন্য ঋণের অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি কিছুটা সুবিধা পাবেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও অর্থনীতির গভীর ক্ষত তিনি কতটা মেরামত করতে পারবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। আর গত ১৫ বছরে জাতির ঘাড়ে ঋণের যে বিশাল বোঝা চাপানো হয়েছে, তার কিস্তি পরিশোধও সহসাই শুরু করতে হবে বিধায় সেসব সামাল দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে।


উল্লেখ্য, দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ায় লাগাম টানাসহ অন্য অনেক ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সফলতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। রাস্তাঘাট বা সড়ক ও জনপথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও তেমন কোনো সফলতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার রাজপথে যেভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজমান, তাতে মানুষ ঘর থেকে বের হতেই ভয় পায়। আর এক্ষেত্রে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাও চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া দেশের অর্থনীতির অন্যতম নিয়ামক ক্ষেত্র পুঁজিবাজার নিয়ে বর্তমান সরকারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের যে আশা ছিল, তা পূরণেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তেমন কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি। বরং পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য ও বডি ল্যাংগুয়েজ নেতিবাচক হওয়ায় পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়েছে বলেই মনে হয়। অথচ বলা হচ্ছিল যে, স্বৈরাচার বিদায় নিলে পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইবে!



এ অবস্থায় দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে যে কিছুটা হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আবার দেশের চলমান রাজনীতির সঙ্গেও সরকারের কাজকর্ম কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেমন, সংস্কার আগে, না নির্বাচন আগে হবে-তা নিয়ে বিতর্ক বর্তমানে বড় আকার ধারণ করেছে এবং এসব বিষয়ে একটি রাজনৈতিক দল মাঠে নেমে আন্দোলন-সংগ্রামের হুমকি দিয়েছে। আগামী বছরের শেষে অথবা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মর্মে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণাকে তারা গ্রহণ না করে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করেছেন। সবশেষ খবরে জানা গেছে, দলটির নেতারা ২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চাচ্ছেন। ফলে আগামী ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। কারণ প্রধান উপদেষ্টা বা তার উপদেষ্টারা নির্বাচনের দিন-তারিখ নিয়ে কোনো আন্দোলন মোকাবিলার পথে হাঁটবেন বলে মনে হয় না। বিশেষ করে বিএনপির মতো বড় দলটি যেহেতু ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন চায়, সেহেতু এ বিষয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা সরকারের জন্য সমীচীন হবে না। দু-একটি দল বাদে দেশের অধিকাংশ দলই এখন নির্বাচনমুখী। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন নিয়ে চিন্তাভাবনা বা পথচলাই বর্তমান সরকারের জন্য এ মুহূর্তে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করি। আর সেই সঙ্গে এ কথাটিও বলে রাখতে চাই, আগামী নির্বাচনে যাতে ক্লিন ইমেজধারী, তথা সৎ, ত্যাগী, জনদরদি, সুশিক্ষিত, মেধাবী শ্রেণির ব্যক্তিরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন, এখন থেকেই সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার একযোগে কাজ করা উচিত।


বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় অতীতের মতো একই ফরমুলার নির্বাচন করে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না; জনপ্রতিনিধির নামে দেশের মানুষ যে লাউ, সেই কদুই পাবে। কারণ নির্বাচনের সময় যদি সাধারণ নিরীহ মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণির মানুষের ভোট কেনাবেচা করা সম্ভব হয় বা ভয়তীতি দেখিয়ে ভোট আদায় করা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে শতবার এমন নির্বাচন করলেও মূল সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। একজন কালোটাকার মালিক টাকার বস্তা নিয়ে নির্বাচনি ময়দানে নামতে পারলে বা বড় বড় ধনাঢ্য মতলববাজ ব্যক্তি বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে নির্বাচনি প্রার্থী হতে পারলে, নির্বাচিত হয়ে তারা সুদে-আসলে তাদের সেসব টাকা উসুল করে নেবেন। আবার কোনো হুন্ডাগুন্ডা বাহিনীর নেতা তাদের বাহিনীর পেছনে অঢেল অর্থ খরচ করে, জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে বা চাপে ফেলে ভোটারদের ভোট আদায় করতে পারলেও ফলাফল একই দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে তারা সবাই সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের টাকা লোপাট করে, টেন্ডারবাজি ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারি কোষাগারের অর্থ তথা জনগণের ট্যাক্সের টাকাসহ প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত পানি করে উপার্জিত দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ সবকিছু লুটে নেবেন। আর সে অবস্থায় রাজনীতির ক্ষেত্রে অতীত আর ভবিষ্যতের তফাত বলতে কিছু থাকবে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও