চাকরির বয়স বাড়ানোর ভালোমন্দ
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো তথ্যটি উড়ছিল বাতাসে। এ সংক্রান্ত পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ আনুষ্ঠানিক জানানো হয়েছে সোমবার। ছেলেদের জন্য ৩৫ আর মেয়েদের জন্য ৩৭ বছর করার সুপারিশের খবরে বেশ উল্লাস সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। তবে সুপারিশে অবসরের সময় বাড়ানোর কথা নেই। প্রায় এক যুগ ধরে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে।
আন্দোলনটি ছিল অনেকটা শাহবাগকেন্দ্রিক। কখনো কখনো তা কিছুটা বেগবান হলেও তেমন তেজি হয়নি। তাদের মিছিল শাহবাগ ছাড়িয়ে বেশি দূর যেতে পারেনি। কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনে গিয়ে সাফল্যের পর চাকরিতে বয়স বাড়ানোর আন্দোলনকারীরা অনেকটা ভরসা খুঁজে পায়। সরকারের দিক থেকেও রেসপন্স মেলে।
এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনকারীদের দাবির চেয়েও বেশি বয়স সুপারিশ করেছে। বয়স বাড়ানোর সুপারিশের বড় কারণ হিসেবে অন্তত তিনটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ১. করোনাভাইরাস মহামারিতে সরকারি চাকরির নিয়োগ বন্ধ ছিল। এই ক্ষতি পোষাতে গত সরকার বয়স ছাড় ঘোষণা করলেও আটকে থাকা নিয়োগে তেমন গতি ছিল না।
অন্যদিকে নতুন নিয়োগের উদ্যোগও ছিল কম। ২. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় গত সরকার দেশের অর্থনীতি নিয়ে সমস্যায় ছিল। ফলে সরকারি-বেসরকারি উভয় চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছিল। ৩. গত সরকারের মামলা-হামলার কারণে অনেক ছাত্র সংগঠনের হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী নিয়মিত নিয়মে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেনি। ফলে তারা চাকরি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
ভেতরের খবরে জানা গেছে, কমিটির এক সদস্য জানান, প্রথমে কমিটির পক্ষ থেকে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছেলে-মেয়েদের জন্য যথাক্রমে ৩২ ও ৩৩ বছর করার চিন্তা ছিল। কিন্তু পরে একাধিক শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর মত পরিবর্তন করে কমিটি। চূড়ান্ত বিচারে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কত হবে তা নির্ভর করবে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, এই সুপারিশই চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সাধারণভাবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য ৩২ বছর। কমিটির প্রস্তাবনায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি-নাতনিদের জন্য আলাদাভাবে কিছু বলা হয়নি। মেয়েদের বয়স দুই বছর বেশি করার পেছনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মেয়েরা অনেক সময় স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ার পর আবার নতুন করে ভর্তি হতে হয়। পড়াশোনার মাঝে বিয়ে হওয়ায় কারও কারও পড়ালেখায় বিরতি পড়ে। বিয়ের পর সন্তান হওয়ার পর অনেক সময় চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে না। এসব বিবেচনায় মেয়েদের বয়স দুই বছর বেশি রাখাকে কমিটি যৌক্তিক মনে করেছে।
অবসরের বয়স সম্পর্কে সুপারিশে কোনো কথা না থাকায় খটকা লাগছে অনেকের কাছে। এখানে একটি ফের আছে। সরকারি চাকরিতে স্বাভাবিকভাবে পেনশনযোগ্য হতে অন্তত ২৫ বছর চাকরির বয়স হতে হয়। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করলে স্বাভাবিকভাবেই অবসরের বয়সসীমাও বাড়াতে হবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- চাকরির বয়সসীমা