নির্বিচার গ্রেপ্তার ও হত্যা মামলা: আরও সতর্ক হতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে

ডেইলি স্টার মাহফুজ আনাম প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৩৭

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে হাজারো ব্যাপারের মধ্যে অন্যতম ছিল আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ, বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কারাবন্দি, হয়রানিসহ নানাভাবে ভীতি প্রদর্শন করা। এক শ্রেণির রাজনৈতিক সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী মহলের কিছু কার্যক্রমের কারণে আবারও আমরা সেই একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি বলে ধারণা করা যেতে পারে। ঢালাওভাবে 'ফ্যাসিবাদীদের দোসর' তকমা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ব্যক্তিগত শত্রু ও গণমাধ্যমের একটি অংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যার ফলে একটি বিপদজনক, অগণতান্ত্রিক ও আইন অবমাননাকারী ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে।


একজন সাংবাদিক হওয়ায় আমি শুরুতেই গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলছি। সাম্প্রতিক তথ্য থেকে জানা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে অন্তত ১২৯ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ৬০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ঢাকায় হত্যা, হত্যা-চেষ্টা, দাঙ্গা ও বেআইনি সমাবেশের অভিযোগে ১২টি মামলা হয়েছে। চট্টগ্রামে ৩৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা-চেষ্টা ও অপহরণের অভিযোগে দুইটি মামলা, বগুড়ায় ২২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে আটটি মামলা, রাজশাহীতে ১৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, চাঁদাবাজি ও হামলার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে।


উপরের তথ্যগুলো দেখলে মনে হতে পারে, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই গণমাধ্যমকর্মীর মুখোশ পরিহিত হত্যাকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কী অসাধারণ এক ভাবমূর্তি! আইনের কী যথাযথ ব্যবহার! গণমাধ্যমের প্রতি কতই না সম্মান দেখানো হচ্ছে! এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন চারজন সাংবাদিক। আর বাকিরা গ্রেপ্তার কিংবা হয়রানির ভয়ে দিন পার করছেন। তারা অফিসেও যেতে পারছেন না, পেশাগত দায়িত্ব পালন তো দূরের কথা। তারা হয় লুকিয়ে আছেন কিংবা 'গৃহবন্দি' হয়ে আছেন। কিন্তু কেন? তাদের অপরাধটা কী?


মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের মার্চ থেকে আমি সাংবাদিকতা শুরু করি এবং ৫২ বছর ধরে এই পেশায় আছি। সাংবাদিকদের মধ্যে সবার আগে আমিই স্বীকার করে নিচ্ছি যে, বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই রাজনীতিকরণের কারণে এই পেশা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও বস্তুনিষ্ঠতার প্রেক্ষাপটে এই খাতের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে। একদল সাংবাদিক পেশার আড়ালে রাজনৈতিক কর্মীতে পরিণত হয়েছেন, যা সাংবাদিকতার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাদের চাটুকারিতা ও সুস্পষ্ট পক্ষপাতের কারণে নৈতিক সাংবাদিকতার চর্চা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিল। এমনকি যারা বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে, তারাও ওই গোষ্ঠীর নিরবচ্ছিন্ন আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেউ কেউ নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।



ক্ষমতাসীন দলের মদদে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, এই সময়ে একদল সাংবাদিক ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। শেখ হাসিনা নিজেই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার সাবেক পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এবং তিনি হেলিকপ্টারে করে গ্রামের বাড়িতে যেতেন। কিন্তু দুর্নীতির কথা জেনেও তাকে কোনো শাস্তি দেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, শুধু বরখাস্ত করেছেন। এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, ওই সাংবাদিকরা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে কী কী করেছেন এবং কত সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং বিপরীতে জনগণের কতখানি ঘৃণা কুড়িয়েছেন।


আমাদের অনুরোধ হলো—তারা যে ধরনের অপরাধ করেছেন, যেমন: দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কার্যালয়কে ব্যবহার, আমলাতন্ত্রকে তাদের কার্যসিদ্ধির জন্য চাপ দেওয়া ইত্যাদি, সেগুলোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনুন। কিন্তু যথাযথ তথ্যপ্রমাণ ছাড়া হত্যার অভিযোগ নয়। আমাদের নিজেদের অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাহলে কেন এরকম হচ্ছে?


ডাক্তার, আইনজীবী বা অন্য যেকোনো পেশার মতো সাংবাদিকদের মধ্যেও আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী—উভয় মতের লোক রয়েছেন। উভয় পক্ষই তাদের দল যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখন নির্লজ্জের মতো ক্ষমতায় থাকার সুফল ভোগ করেছে। শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনামলে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকরা এক ধরনের দায়মুক্তির স্বাদ পেয়েছেন এবং ভেবেছেন এই ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা 'কখনোই শেষ হবে না'। যার ফলে তারা আপাদমস্তক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।


এখন সেই 'অপর পক্ষ', যারা এতদিন শোষণের শিকার হয়েছিলেন, তারা সামনে এসেছেন। এখন এমন একটি চিত্র দাঁড় করানো হচ্ছে যে, আওয়ামীপন্থী নন, এমন প্রত্যেকটি সাংবাদিককেই এখন ভালো সাংবাদিকের উদাহরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে এবং আওয়ামীপন্থীদের মতো মন্দ সাংবাদিক যেন গোটা পৃথিবীতে আর নেই! কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনার বিষয়টি নজিরবিহীন। এর আগে উভয় পক্ষের কেউই একে অপরের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনেনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও