উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ, তবে কি মমতার সময় ফুরিয়ে এলো?
আরজি কর ইস্যুতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এখনো উত্তাল। ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট মেডিকেল কলেজটির সেমিনার হল থেকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও পরবর্তীতে হত্যার শিকার চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন কলেজের গণ্ডি অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ভারতে।
আন্দোলনকারীরা প্রবল প্রতিবাদে সরব হয়েছেন, রাজপথ কাঁপিয়েছেন এমনকি আন্দোলনের কিছু জনপ্রিয় শ্লোগানের মধ্যে ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘দফা এক দাবি এক, মমতার পদত্যাগ’ ইত্যাদি। এই সবকিছু ছাপিয়ে কলকাতার আন্দোলনের যে রূপটি অবাক করার মতো তা হচ্ছে, এখানে আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলনের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দলকে অনুপ্রবেশ করতে দেয়নি।
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ছিল এরকম, ‘সোমবার রাতে ফিয়ার্স লেনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে গিয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা অধুনা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাতজাগা আন্দোলন থেকে আওয়াজ ওঠে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গো ব্যাক। এক জুনিয়র তার কাছে গিয়ে বলেন, আপনি চলে যান, এখানে দাঁড়াবেন না।’
একইভাবে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুনাল ঘোষ যখন জানান দেন যে, ‘পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের আলোচনার জট নিরসনে তিনি ভূমিকা পালন করেছেন, বিষয়টি ডাক্তারদের পক্ষ থেকে নাকচ করে দিয়ে বলা হয়, এটা সর্বৈব মিথ্যা, তাদের আন্দোলনে রাজনীতির প্রবেশ নিষেধ।’
কলকাতার রাস্তায় এভাবে প্রতিদিন আন্দোলনকারীদের সমর্থনে জড়ো হচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ। এরকম সিপিএম এক নেতার ভাষণের একপর্যায়ে একজন নারী বলে ওঠেন, ‘আপনারা রাজনীতি এবং দলাদলির কথা কেন বলছেন? ধর্ষণকাণ্ডের বিচারের কথা কই?’ আন্দোলনকারীদের সমর্থনে জল দিয়ে সহায়তা করতে চাওয়া একজন রাজনীতিককে জানিয়ে দেওয়া হয় যে তাদের তহবিলে প্রচুর জল রয়েছে, তাদের জলের প্রয়োজন নেই।’
এভাবেই একটি আন্দোলনকে সর্বজনীন করে তোলা হচ্ছে কলকাতায়, যার রেশ ছড়িয়ে পড়ছে ভারতের অপরাপর অঞ্চলগুলোয়ও। কলকাতায় চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে ভারতের মুম্বাই, পুনে, হায়দ্রাবাদ এবং দিল্লির মতো শহরগুলোয়ও জড়ো হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সবার মধ্যে একটাই কথা তা হচ্ছে, ভয়হীন চিত্তে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা চান মানুষ।
কিছুদিন ধরে কলকাতার আন্দোলনের যে ধরন ছিল সেটা থেকে কেন্দ্রের শাসকদের একটা ধারণা হয়ে থাকতে পারে যে এই বুঝি মুখ্যমন্ত্রী মমতার সময় ফুরিয়ে এলো। চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ, এখন রাজনৈতিকভাবে সজোরে ধাক্কা দিলেই পতন অনিবার্য।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এই ক্ষেত্রে মমতার পতন নিয়ে বিরোধীরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে আশায় যেন অনেকটা গুড়েবালি পড়ার মতো অবস্থা। সাধারণের এই আন্দোলন বাস্তবিক অর্থে একটা নাগরিক আন্দোলনে রূপলাভ করেছে, যার অর্থে কোনো নির্দিষ্ট শাসক দল নয়, সার্বিকভাবে গোটা ব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার প্রয়োজন, যাকে এককথায় বলা যায় সুশাসন, যে বিষয়টির বড়ই অভাব রয়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিক্ষোভে উত্তাল
- ধর্ষণের পর হত্যা