কীভাবে এতটা নৈতিক অবক্ষয়ে নিমজ্জিত হলাম আমরা?

ডেইলি স্টার মাহফুজ আনাম প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৪

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হওয়ায় আমরা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে অভিনন্দন জানাই। একইসঙ্গে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনার তদন্তে গত মঙ্গলবার গঠিত কমিশনকেও অভিনন্দন জানাই। পাঁচ সদস্যের এই কমিশন ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবে। হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বাধীন এই কমিশন পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করবে। এসব গোয়েন্দা সংস্থা রাষ্ট্র, সরকার বা সমাজের সুরক্ষা দেওয়ার বদলে ভিন্নমত দমন, বিরোধীদের নির্মূল ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সরকারি নীতি বাস্তবায়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল।


অন্তর্বর্তী সরকার যতগুলো উদ্যোগ নিতে পারত, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ ও জনবান্ধব উদ্যোগের একটি। এই উদ্যোগের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা বা উপদেষ্টাদের অভিনন্দন জানাই। গণমাধ্যম, বিশেষত এই পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা কমিশনের অশেষ সাফল্য কামনা করছি। শুধু ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করলেই হবে না। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।


পরের কাজটির সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা বেশি। ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য বৃদ্ধি, বিশেষত, বিরোধীদলকে নির্মূলের কাজে নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহারের এই চর্চা দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগ শুরু করেনি। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বহুল ব্যবহারের এই চর্চা শেখ হাসিনার শাসনামলে চরম পর্যায়ে পৌঁছালেও এর সূত্রপাত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ও সক্রিয় রাজনীতিতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রবেশের মাধ্যমে। আমরা নিশ্চিতভাবে জানি, সত্তরের দশকের শেষের দিকে যখন রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে গঠন করা হচ্ছিল, তখন রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের সদস্যদের এই দলে যোগ দিতে বাধ্য করার জন্য একাধিক নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়োজিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে জেনারেল এরশাদের এক দশকের শাসনামলেও এই ধারাবাহিকতা অটুট ছিল। সেই সময় তিনি নিজেও এসব বাহিনী তার নিজের দল গঠনে ও বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগান। আমরা সবাই আশা করেছিলাম যে ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে এই অন্যায়ের অবসান ঘটবে।



দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ, নির্বাচিত এই দুই দলের সরকারের আমলেও এই চর্চা অব্যাহত থাকে এবং এর সবচেয়ে ন্যক্কারজনক অধ্যায়টি রচিত হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এই হামলার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। আওয়ামী লীগের নারী শাখার প্রধানসহ মোট ২৩ জন নিহত হন এই ঘটনায়।


অর্থাৎ, ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে গত তিন দশকে যখনই আমরা পর্দার আড়ালের কারসাজির বদলে স্বচ্ছ, নাগরিক-কেন্দ্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করেছি, তখনই নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপ বেড়েছে এবং ক্ষমতাসীন সরকারগুলো জনগণের আস্থা হারিয়েছে। কীভাবে আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী, জনপ্রিয় ও সুসংহত রাজনৈতিক দল ধারাবাহিকভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বৃহৎ পরিসরে নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে, তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামল। এই নির্ভরতার মধ্যে ছিল তাদেরকে দলের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা, যার একটি উদাহরণ ছিল দলের প্রায় প্রতিটি পর্যায়ের নেতাদের মনোনয়নে তাদের অনুমোদন নেওয়া। বিষয়টি এতটাই প্রকট হয়ে পড়েছিল যে, ইউনিয়ন ও জেলা পর্যায়ের উদীয়মান নেতাদেরকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর 'আশীর্বাদ' নিয়ে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হতো।


শেখ হাসিনার পতনের পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। তবে ২০১০ সালের পর থেকে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ছিল মানুষকে তাদের বাসা কিংবা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছরও গুম করে রাখা এবং পরিবারসহ কাউকেই এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানানোর সামান্যতম প্রয়োজনও বোধ না করা। কখনো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কোনো জায়গায় সেসব ব্যক্তির মরদেহ খুঁজে পাওয়া যেত। কখনো কখনো তারা বাড়ি ফিরে আসতেন, কিন্তু ভবিষ্যৎ পরিণামের কথা ভেবে নিশ্চুপ থাকতেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছরের জন্য নিখোঁজ থাকতেন কিংবা কখনোই ফিরে আসতেন না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও