দাম, ব্যবসা ও ব্যবসায়ী

www.ajkerpatrika.com চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৫

চলমান আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে হিংসাত্মক ঘটনা বাড়ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ভীতি বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যতটা না ভুগছে, তার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর। শুধু টিয়ার গ্যাসের ঝাঁজেই নয়, মানুষ বাজার করতে গিয়েও এখন কাঁদছে।


শহরগুলোতে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। বিক্রেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে পাইকারি বাজারে পণ্যের সরবরাহ নেমেছে অর্ধেকে। এতে প্রতি কেজি সবজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। অবশ্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অজুহাত মাত্র। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক জরিপ থেকে জানা যায়, খাদ্য মূল্যস্ফীতি চলতি বছর রেকর্ড ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্যমতে, দেশে গত পাঁচ বছরে শুধু ভোগ্যপণ্যের দাম ৩১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চাল, চিনি, সয়াবিন তেল, গরুর মাংসের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি।


অবশ্য আমাদের দেশে জীবনের দাম বাড়ে না, সৃজনশীলতা বা স্বপ্নের দাম বাড়ে না, এমনকি মানুষের দামও বাড়ে না। চারদিকে যে হারে মানুষ মারার ‘উৎসব’ চলছে, তাতে মনে হচ্ছে জীবন কত সস্তা! জীবনের দাম কমলেও বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম শুধুই বাড়ে। কারণে বাড়ে, অকারণে বাড়ে। বাড়তেই থাকে। দাম বাড়ার জন্য কোনো কারণও লাগে না। জিনিসপত্রের দাম বাজেটের আগে বাড়ে, পরেও বাড়ে। ঝড়, বৃষ্টি হলে বাড়ে, না হলেও বাড়ে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাম বাড়লেও বাড়ে। নির্বাচিত ‘ঢিলেঢালা’ সরকারের শাসনামলে বাড়ে, এমনকি অনির্বাচিত ‘শক্ত’ সরকারের আমলেও বাড়ে। রমজানের আগে বাড়ে, পরেও বাড়ে। আন্দোলনের আগে বাড়ে, আন্দোলনের মধ্যে বাড়ে, পরেও বাড়ে। দাম একবার বাড়লে তা আর কমে না। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাম কমলেও আমাদের দেশে দাম কমে না। এমনকি দেশে বাম্পার ফলন হলেও খাদ্যশস্যের দাম কমে না। মানুষের বয়সের মতো, আমাদের জীবনের সামগ্রিক হতাশার মতো জিনিসপত্রের দাম কেবল বাড়ে, বাড়তেই থাকে। 


দাম আপনা-আপনি বাড়ে না, বাড়ানো হয়। বলা বাহুল্য, এ দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আমদানিকারক, ব্যবসায়ী, আড়তদার, চাঁদাবাজ, আন্তর্জাতিক বাজার ইত্যাদির ভূমিকা থাকলেও সরকারি নীতির ভূমিকাও উপেক্ষণীয় নয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, এসব নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও বড় বেশি ক্ষোভ নেই। এরও অবশ্য কারণ আছে। আমাদের দেশের শাসকেরা নানা কৌশলে মানুষের সহ্যশক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে যদি একটু একটু করে নির্যাতন করা হয়, আঘাত করা হয়, তাহলে একসময় তা সয়ে যায়। এরপর আঘাতের মাত্রা বাড়ালেও খুব একটা ভাবান্তর হয় না। আমাদের দেশের মানুষকেও একটু একটু করে আঘাত ও নির্যাতন চালিয়ে সর্বংসহা বানিয়ে ফেলা হয়েছে।


তারপরও অবশ্য আমরা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামাই। এটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাতেই হয়। কারণ, বাঁচার জন্য আমাদের খেতে হয়, জিনিসপত্র কিনতে হয়; কাজেই দাম যত বেশিই হোক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমাদের সংগ্রহ করতেই হবে। কম হোক, বেশি হোক, ভাত 
হোক আলু হোক, আমিষ হোক আর নিরামিষ হোক, সাপ-ব্যাঙ-কুকুরই হোক, আর মরা মুরগি, রাসায়নিকমিশ্রিত সবজিই হোক, খেতে হবেই। না খেয়ে মানুষ বাঁচে না। বাঁচতে পারে না। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও