যে কান্না থামার নয়, যে ক্ষত মোছার নয়

প্রথম আলো মনোজ দে প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১২:৪২

গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে যা ঘটল, জানি না তাকে এককথায় কী বলা যাবে। তবে ২০২৪ সালের মধ্য জুলাইয়ে যা ঘটে গেল তা অভূতপূর্ব, নজিরবিহীন। কারফিউ দিয়ে সেনাসদস্যদের নামিয়ে, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে সরকারকে। রাস্তায় রাস্তায় ধ্বংসচিহ্ন এখন দৃশ্যমান। বাজেট বরাদ্দ দিয়ে সেই সব ধ্বংসচিহ্নকে হয়তো মুছে ফেলা যাবে। একদিন সেটা মুছেও যাবে।


কিন্তু যে মায়েদের বুক খালি হলো, যে শিশুরা বাবা হারাল, যে বোনেরা তাঁদের ভাইদের হারালেন, যে কিশোর-তরুণদের সামনে থেকে তাঁদের বন্ধুরা মারা গেলেন, সেসব স্বজনহারা, বন্ধুহারা মানুষের ক্ষতচিহ্ন কেউ কখনো কি নিরাময় করতে পারবে?


কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ-সহিংসতায় প্রথম আলোর সর্বশেষ হিসাবে ২০৯ জন মারা গেছেন (যদিও এ তথ্য পূর্ণাঙ্গ নয়)। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধ হওয়া মানুষ যেমন আছেন আবার অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হওয়া মানুষও আছেন। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, ১৯৪৭ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোনো আন্দোলনেই মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে এত প্রাণহানি আর হয়নি।


কোটা সংস্কারের মতো নিরীহ একটা দাবির আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে কেন এমন অভাবনীয় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ল, সেটা নিশ্চিতভাবেই সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হবে। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও পুঞ্জীভূত ক্ষোভ—দুইয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এ আন্দোলনে।


যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ শিক্ষার্থী ও তরুণ; রয়েছে শিশু-কিশোরেরাও। তাঁরা যে সবাই মিছিলে গিয়ে, বিক্ষোভ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন, তা নয়। কেউ পড়ার টেবিলের পাশের জানালায় দাঁড়িয়ে, কেউ বারান্দায় দাঁড়িয়ে, কেউবা আবার ক্রেতার বাসায় দুধ পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন।


জীবন যাদের এখনো শুরুই হয়নি, তারাও আজ নির্মমতার শিকার হয়ে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেল। ঢাকার মিরপুরের ১১ বছরের শিশু সাফকাত সামিরের কথাই ধরা যাক। গত শুক্রবার দুপুরে মিরপুরে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘাত চলছিল। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। সেই ধোঁয়া ঘরের মধ্যে ঢুকলে জানালা বন্ধ করতে যায় সামির। গুলি এসে তার চোখ ফুঁড়ে মাথায় বিদ্ধ হয়। সামির তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান।


নারায়ণগঞ্জের সাড়ে ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ। দুপুরে খাওয়ার পর খেলতে গিয়েছিল ছাদে। বাড়ির সামনে সংঘর্ষ বাধলে বাবা দীপক গোপ দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে ছাদ থেকে আনতে যায়। ভয় পাওয়া শিশুটিকে কোলে তুলে নিতেই বুলেট এসে বেঁধে তার মাথায়। তিন দিন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুর কাছে হেরে যায় শিশুটি। মা-বাবার কোল তো শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। সেখানেই জীবন শুরু না করা একটা শিশু কেন গুলি খেয়ে মারা যাবে। রিয়াও তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। প্রথম আলোয় রিয়ার গত জন্মদিনের একটা ছবি ছাপা হয়েছে। কেকের সামনে না জ্বলা কিংবা নেভানো একটা মোমবাতি। এর চেয়ে নির্মম প্রতীক আর কি হতে পারে!


কিশোর মোবারক ঢাকার পান্থপথের বক্স কালভার্ট এলাকায় গরুর খামার বস্তিতে মা-বাবার সঙ্গে থাকত। চারটা গাভি ছিল তাদের। সেই গাভির দুধ বিক্রি করেই সংসার চলত। ক্রেতাদের বাসায় দুধ পৌঁছে দিতে গত রোববার (২১ জুলাই) দুপুরের পর বের হয়েছিল মোবারক। গ্রিনরোডের ওইখানটায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মাথায় গুলি লাগে তার। মাত্র তেরোতেই থেমে গেল তার জীবন।


দশম শ্রেণির নাইমা সুলতানা। ঢাকার মাইলস্টোন কলেজে পড়ত। উত্তরার ৫ নম্বর সড়কের ভাড়া বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ গুলি এসে বিদ্ধ হয় নাইমার মাথায়। নাইমার মা আইনুন্নাহারের প্রশ্ন, ‘আমার বুকের ধনটারে কে এমনে মারল? কী কারণে মারল? আমি অনে কী নিয়া বাঁচুম?’ ঘর মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। সেখানেই কেন প্রাণ হারাতে হলো মাত্র ১৫ বছরের কিশোরীকে?


ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ফারহান ফাইয়াজ, যে তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছিল, ‘এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ মনে রাখে।’ ২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর আলোয় চোখ রাখা ফারহানের বয়স আঠারোও হয়নি। মুখ ও বুকে রাবার বুলেটের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে হারিয়ে গেছে ফরহান।
যত দিন গড়াচ্ছে পত্রিকার পাতায় একের পর এক বিয়োগান্ত ঘটনা সামনে আসছে।। সেই সব ঘটনা পড়ছি আর শোকে, বিহ্বলতায়, হতাশায়, ভয়ে আমরা মুষড়ে পড়ছি, আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে। জুলাই আন্দোলনে সারা দেশে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে তাতে কতজন শিশু ও ছাত্র নিহত হয়েছে তার পৃথক কোনো পরিসংখ্যান এখনো জানা যাচ্ছে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও