চকলেটের ইতিহাস এবং আর্থ-সামাজিক ও সাস্কৃতিক প্রভাব
চকলেটের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও ভালোবাসা বহু প্রাচীন এবং বিস্তৃত। প্রাচীন মায়া সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিককাল পর্যন্ত পর্যন্ত চকলেটের একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় ইতিহাস রয়েছে। চকলেট শুধুমাত্র স্বাদের কারণে নয়, এর ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণেও গুরুত্বপূর্ণ।
৭ জুলাই বিশ্ব চকলেট দিবস হিসেবে পালিত হয়, এটি সেই দিনটির স্মৃতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় যেদিন চকলেট প্রথম ইউরোপে এসেছিল। এই দিবসটি চকলেট প্রেমীদের জন্য তাদের প্রিয় মিষ্টান্ন উপভোগ করার এবং এর ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে আরও জানার একটি সুযোগ।
চকলেটের উৎপত্তি প্রাচীন মেসোআমেরিকায়, যেখানে মায়া এবং অ্যাজটেকরা কোকো গাছ থেকে চকলেট তৈরি করত। তারা কোকো বীজকে পিষে পানীয় তৈরি করত, যা বেশ তিতা ছিল এবং প্রায়ই মশলা দিয়ে মেশানো হতো। মায়ারা চকলেটকে দেবতাদের উপহার হিসেবে বিবেচনা করত এবং এটি ধর্মীয় আচার এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হত। অ্যাজটেকরা কোকো বীজকে মুদ্রার মতো মূল্যবান বিবেচনা করত এবং এটি ধনী ও অভিজাতদের পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
১৫০০ শতকের শুরুর দিকে স্প্যানিশ বিজেতারা আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করার সময় চকলেটের সন্ধান পায়। তারা চকলেটকে ইউরোপে নিয়ে আসে, যেখানে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রাথমিকভাবে, চকলেট পানীয় হিসেবেই ব্যবহৃত হত এবং এর তিতা স্বাদ মধু বা চিনি দিয়ে মিষ্টি করা হতো। ইউরোপে চকলেট ধনী এবং রাজপরিবারের জন্য একটি বিলাসবহুল পানীয় হয়ে ওঠে এবং এটি ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে চকলেটের উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবর্তিত হয়। ১৮২৮ সালে কোকো প্রেস আবিষ্কার করে কোকো বাটার এবং কোকো পাউডারকে পৃথক করা সম্ভব হয়, যা শক্ত চকলেট তৈরির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। ১৮৪৭ সালে, ব্রিটিশ কোম্পানি ফ্রাই অ্যান্ড সন্স প্রথমবারের মতো খাওয়ার উপযোগী চকলেট বার তৈরি করে। এরপর থেকে, চকলেটের জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এটি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন এবং স্ন্যাকসের প্রধান উপাদান হয়ে ওঠে।
চকলেটের বিভিন্ন প্রকার এবং প্রস্তুত প্রণালী রয়েছে, যা বিভিন্ন স্বাদ এবং ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। ডার্ক চকলেট উচ্চ কোকো কনটেন্ট এবং কম চিনি দিয়ে তৈরি হয়, যার ফলে এটি একটি তিক্ত স্বাদ পায়। এতে সাধারণত ৫০% থেকে ৯৯% কোকো সলিডস থাকে এবং এটি সাধারনত এর স্বাদ এবং স্বাস্থ্যগত গুণাবলীর জন্য পরিচিত। ডার্ক চকলেটের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী রয়েছে এবং এটি হার্টের স্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
মিল্ক চকলেট ডার্ক চকলেটের তুলনায় মিষ্টি এবং ক্রিমি। এটি কোকো সলিডস, কোকো বাটার, চিনি এবং দুধ বা দুধের পাউডার দিয়ে তৈরি হয়। মিল্ক চকলেটের সাধারণত ২০% থেকে ৫০% কোকো সলিডস থাকে এবং এটি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন এবং স্ন্যাকসের জন্য জনপ্রিয় উপাদান।