উপকূলের মানুষকে রক্ষার সময় কি শেষ হয়ে যাচ্ছে

প্রথম আলো ড. নজরুল ইসলাম প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১৯:৩১

উপকূলের জনগণকে আবহমানকাল ধরে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলা করে বসবাস করতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যেমন ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সম্পর্কে সতর্কীকরণের সমস্যা কমেছে। ‘মুজিব কেল্লা’ নির্মাণের ফলে আশ্রয় নেওয়ার জায়গা বেড়েছে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিশেষত, জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বৃষ্টির পানি সহজে সরে না। এ কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং অনেক সময় এক ঘূর্ণিঝড়ের জলাবদ্ধতা না কাটতেই আরেক ঘূর্ণিঝড় এসে পড়ে।


কেন উপকূলের এ অবস্থা হলো এবং ভবিষ্যতে কী করা প্রয়োজন, তা বুঝতে হলে বাংলাদেশের পানি উন্নয়নের ইতিহাসের দিকে একটু তাকানো প্রয়োজন। পঞ্চাশের দশকেই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি পানি উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হয়। তার মধ্যে অন্যতম ছিল উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্প, যার অধীনে কয়েক দশকে ৫ হাজার ৬৬৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে পুরো উপকূলকে ১৩৯টি পোল্ডারে বিভক্ত করা হয়।


উদ্দেশ্য ছিল জোয়ারের লবণাক্ত পানি উপকূলের জমিতে বিস্তৃত হতে না দেওয়া এবং এর ফলে পোল্ডারগুলোতে আরও বেশি ধান উৎপাদন করা। প্রথম দিকে ধান উৎপাদন ঠিকই বাড়ে। কিন্তু সময় গেলে পোল্ডারের বিভিন্ন কুফল দেখা দিতে থাকে।


পোল্ডারের ধারণাটি আসে নেদারল্যান্ডস থেকে। বাংলাদেশের মতো নেদারল্যান্ডসও একটি বদ্বীপদেশ। তাই সে দেশের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হয়েছিল।


সে কারণে বিশ্বব্যাংক এবং এফএও বাংলাদেশের উপকূলের উন্নয়নের পন্থা নির্ণয়ে ওলন্দাজ বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হয় এবং বহুলাংশে তাঁদের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলের ওপর নেদারল্যান্ডসের মতো পোল্ডার কর্মসূচি চাপিয়ে দেওয়া হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি পরামর্শক ও ঋণদাতা সংস্থাগুলো নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির মৌলিক পার্থক্যগুলো অনুধাবন করেনি।


প্রথমত, নেদারল্যান্ডসের মতো পোল্ডার বানিয়ে সমুদ্রগর্ভ থেকে জমি উদ্ধারের কোনো প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশের ছিল না এবং আজও নেই। বরং এখনো প্রতিবছর প্রায় ১৯ বর্গকিলোমিটার ভূমি বঙ্গোপসাগর থেকে উত্থিত হয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগ হচ্ছে।


দ্বিতীয়ত, যেখানে বাংলাদেশের নদ-নদীর বার্ষিক প্রবাহের পরিমাণ পায় ১ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার, সেখানে নেদারল্যান্ডসের জন্য তা মাত্র প্রায় ৯৩ বর্গকিলোমিটার।


তৃতীয়ত, যেখানে বাংলাদেশের নদ-নদী বাহিত পলিবালির পরিমাণ এখনো প্রায় ১১৫ কোটি টন, সেখানে নেদারল্যান্ডসের জন্য তা মাত্র প্রায় ৩৪ লাখ টন।


চতুর্থত, বাংলাদেশে নদীপ্রবাহের ঋতুভেদ চরম; বছরের মোট প্রবাহের প্রায় ৮০ শতাংশ বর্ষাকালের মাত্র চার মাসে কেন্দ্রীভূত থাকে। পক্ষান্তরে, নেদারল্যান্ডসে কার্যত কোনো ঋতুভেদ নেই।


উভয় দেশই বদ্বীপে অবস্থিত হলেও নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের নদ-নদী এবং উপকূল পরিস্থিতি ভিন্ন, সমস্যাও ভিন্ন। ঋতুভেদ না থাকায় নেদারল্যান্ডসে কার্যত নদীপ্রবাহজনিত বন্যার সমস্যা নেই।


বিপরীতে বাংলাদেশের জন্য বন্যা প্রশমনই বড় চ্যালেঞ্জ। নদীতে পলি না থাকায় নেদারল্যান্ডসের জন্য পলি ব্যবস্থাপনার কোনো সমস্যা নেই। সে কারণে নেদারল্যান্ডস শুধু দুটি খোলা রেখে বাকি সব নদীমুখ বন্ধ করে দিতে পেরেছে। বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপের কথা ভাবাই যায় না, কেননা দ্রুতই পলিবালি সব নদী ভরাট করে দেবে।


বাংলাদেশের জনগণ এ দেশের বিশেষ অবস্থার উপযোগী সমাধান ঠিকই উদ্ভাবন করেছিলেন এবং সেটা ছিল অষ্টমাসি বাঁধ। উপকূলে এসব বাঁধ নির্মিত হতো শুষ্ক আট মাসের জন্য, যাতে জোয়ারের নোনাজল ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। বর্ষার শুরুতে এসব বাঁধ অপসারণ করা হতো। তখন নদীর পানি জোয়ারের পানিকে ঠেকিয়ে দিয়ে উপকূলের ভেতরে প্রবেশ করত। তার সঙ্গে প্রবেশ করত পলিমাটি। এই পলিমাটির পতনের ফলে উপকূলের প্লাবনভূমির উচ্চতা ক্রমে বৃদ্ধি পেত।


কিন্তু ওলন্দাজ ও অন্যান্য বিদেশি পরামর্শক ও ঋণদাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের এই বিশেষ পরিস্থিতি এবং তার জন্য উপযোগী বিশেষ সমাধানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি না করে বরং নেদারল্যান্ডসের মতো স্থায়ী বাঁধ ও পোল্ডার নির্মাণে অগ্রসর হন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও