বজ্রপাতে কেন মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে

প্রথম আলো গওহার নঈম ওয়ারা প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২৪, ১৫:০০

রংপুরের পীরগঞ্জের দুই ভাই আরও অনেকের সঙ্গে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বীর বাসিন্দা ইউনিয়নের নোয়াবাড়ী গ্রামে এসেছিলেন ধান কাটতে। ধানকাটা শ্রমিক আফজাল আর আমীর গত ১৮ মে বজ্রপাতে আহত হন। কাছের মাঠ থেকে অন্য ব্যক্তিরা ছুটে এসে দুই ভাইকে হাসপাতালে নিলে সেখানে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। লাশ পড়ে থাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সংবাদমাধ্যমকে জানান, নিহত দুজনের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এলে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।


২৮ বছর আগে ১৯৯৬ সালের মে মাসের ১৩ তারিখে কালিহাতী, গোপালপুর, বাসাইল, ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার ৪০টি গ্রাম টর্নেডো ও বজ্রপাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই বিভীষিকাময় ঘটনায় ধান কাটতে আসা রংপুর অঞ্চলের অনেক শ্রমিক নিহত হন। দুই দিন পর তাঁদের লাশ এক গর্তে কবর দেওয়া হয়। সেই শ্রমিকদের নাম আমরা কেউ জানি না। আফজাল-আমীরের নাম জানি, তাঁদের লাশ প্রমাণ সাপেক্ষে আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস মেলে।


২৮ বছরে পরিবর্তন শুধু এটুকুই। গরিব মানুষের জন্য এটাই-বা কম কী? বজ্রপাতে মৃত মানুষের মিছিল দিন দিন লম্বা হচ্ছে।


আট বছর আগে ২০১৬ সালের ১৭ মে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাতকে সরকারি তালিকাভুক্ত দুর্যোগের মর্যাদা দেয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনায় এর আগে ১২টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা উল্লেখ ছিল। সেদিনের সেই সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতেই জানিয়ে দেওয়া হয়— জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের বজ্রপাত হচ্ছে।


আসলেই কি তা-ই? কিসের ভিত্তিতে এই উপসংহার। সেসব আলোচনা বা প্রশ্ন না উঠলেও জানিয়ে দেওয়া হয় বজ্রপাত পরিস্থিতিতে সরকার খুবই উদ্বিগ্ন, অচিরেই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে মসজিদ-মন্দিরের মাধ্যমে বজ্রপাত নিয়ে সতর্কবার্তা প্রচার করা হবে। যারা মারা যাবে, তারা পাবে ২৫ হাজার টাকা আর আহত হয়ে বেঁচে থাকলে পাবে ৭ হাজার টাকা। আট বছর ধরে ক্ষতিপূরণ একই আছে।


সে বছর (২০১৬ সাল) সংবাদ সম্মেলনের দিন পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বজ্রপাতে সারা দেশে মৃত মানুষের সংখ্যা ছিল ৮১। চলতি বছর (২০২৪) একই সময়কালে মৃত মানুষের সংখ্যা ৯৫। এর মধ্যে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আছেন ৬৭ জন। গত আট বছরে বজ্রপাতে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এই পরিসংখ্যান থেকে উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতির আলামত খুঁজে পাওয়া যাবে না।


বজ্রপাত থেকে মানুষের প্রাণ রক্ষার জন্য প্রথমে নেওয়া হয়েছিল তালগাছ সৃজন প্রকল্প। কথা ছিল, সারা দেশে ৪০ লাখ তালগাছ লাগিয়ে তাক লাগিয়ে দেওয়া হবে। তাক লাগানো দূরে থাক, ব্যবস্থাপনার তালগোলে প্রায় শতকোটি টাকা পানির মতো বেরিয়ে যেতে বোঝা গেল, তালগাছের চারা কোথাও মরে গেছে, কোথাও চারা না লাগিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে। ‘গায়েবি’ গাছের ছড়াছড়ি।


এবার পরিকল্পনা কমিশন ঝেড়ে কাশল, খুবই পাণ্ডিত্যপূর্ণ সবক এল, সেখান থেকে ‘তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া। কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাও হয়নি।’ তবে কি ঝোঁকের মাথায় আগাপাছতলা না ভেবেই তারা এই প্রকল্পের ছাড়পত্র দিয়েছিল। ঝোঁকের ঝাঁকিতে টাকা ঝরেছে, কিন্তু মানুষের ঝুঁকি কমেনি।


শেষ পর্যন্ত আবার এক মে মাসে (২০২২ সালের ১১ মে) তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী সভা করে জানালেন, তালগাছ লাগানোর কার্যক্রমটি বাতিল হয়েছে। একটি তালগাছ বড় হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৪০ বছর। এত সময় ধরে অপেক্ষার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও