![](https://media.priyo.com/img/500x/https%3A%2F%2Fimages.prothomalo.com%2Fprothomalo-bangla%252F2024-05%252F0e8841a4-6a5a-44b3-ac8e-89ad53285e52%252FMasuk_Art_16_05_2024.jpg%3Frect%3D130%252C0%252C1673%252C1115%26auto%3Dformat%252Ccompress%26fmt%3Dwebp%26format%3Dwebp%26w%3D640%26dpr%3D1.0)
সুন্দরবনে বাঘের মুখে পড়েছিলেন ৯ বছর আগে। তালপট্টি এলাকায়। সঙ্গীরা লড়াই করে উদ্ধার করে আনেন বনজীবী কুদ্দুসকে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কুদ্দুস। এখন তাঁর বয়স ৫৫। এই বয়সেই কি বসে থাকবেন আবদুল কুদ্দুস? মধু সংগ্রহ করতে আবারও ঢুকেছেন সুন্দরবনে, বৈধ অনুমতি নিয়ে। এবার তিনি সুন্দরবনের কলাগাছী নদীতে শিকার হন কুমিরের আক্রমণের। কুমির তাঁর হাতে কামড় বসিয়ে তাঁকে টেনে নিতে থাকে। সঙ্গীরা লাঠি-হাঁড়ি যা পেয়েছেন, তা দিয়ে পানিতে কোপাতে থাকেন, শেষে তাঁরা তাঁর পা ধরে টানতে থাকলে কুদ্দুসের হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায় কুমির। রক্তে লাল হয়ে যায় নদীর পানি।
প্রথম আলো অনলাইনে আবদুল কুদ্দুসের ছবি দেখি। তাঁর চোখ দুটো দেখি। এমন করুণ চাউনি! বড় মায়া লাগে!
প্রতিবছর সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মারা যায় প্রায় ৬০ জন। খুলনা বিভাগে সাপের কামড়ে মারা যায় বছরে প্রায় ৬১৫ জন। এরপরেও মানুষ সুন্দরবনে যায়। মধু সংগ্রহ করে। গোলপাতা সংগ্রহ করে। জেলেরা যান মাছ ধরতে।
বাংলাদেশের যুবকেরা ভয়াবহ বিপৎসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করে কাজের খোঁজে। ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টায় মরক্কোর মতো দেশগুলো থেকে রবারের নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশের মানুষ পাচারকারীর কবলে পড়ে জঙ্গলে জিম্মি জীবন কাটায়, মরে পড়ে থাকে দূরপ্রাচ্যের পথে। হিমশীতল বাহনে চড়ে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে জীবন্ত বরফ হয়ে মরে যায়। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ১৮ হাজার ১৬৬টি প্রবাসীর মরদেহ এসেছে দেশে। পাঁচজনে একজন সেখানে মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়।
এই জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাওয়া মানুষেরাই বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এগিয়ে নেওয়ার জন্য সিসিফাসের মতো চেষ্টা করছে। এদের জন্যই বাংলাদেশ হারছে না। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার শুরুতে বলা শুরু হলো, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। প্রস্তুত থাকতে হবে। ব্যয়-সংকোচন করতে হবে।
২০২২ সালের নভেম্বরে একাধিক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে আহ্বান জানান। তিনি দেশে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে ২০২৩ সালের সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করে দেন এবং ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান। ২০২৩ সাল পার হয়ে গেছে। দেশে দুর্ভিক্ষ হয়নি। দেশে দুর্ভিক্ষ হতে দেয়নি অন্য আরও অনেক কারণের সঙ্গে দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। আমাদের প্রবাসী শ্রমিকেরা। আমাদের আবদুল কুদ্দুসেরা। আর আমাদের পোশাকশ্রমিকেরা।
১২ মে মা দিবসে আমি ছিলাম দুবাই থেকে ঢাকার ফ্লাইটে। এই ফ্লাইটে অভিবাসী শ্রমিকেরা থাকেন। আমার পাশে দুজন কথা বলছিলেন। একজন আরেকজনকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, প্লেন কি মেঘের নিচে নেমেছে?
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাঘের আক্রমণ