বিএনপি এখন কোন পথে যাবে
বিএনপির সামনে এখন নানা পথ। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপির এখন কী করবে? সামনে উপজেলা নির্বাচন আছে। এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। জামায়াত নিয়ে একসঙ্গে আন্দোলন করার বিষয়টিও আলাপ-আলোচনায় আছে।
সর্বোপরি দলকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠনের বিষয়টিও দেখতে হবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টিও আছ। সব মিলিয়ে বিএনপিকে এখন অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। বিএনপির হাতে এখন অনেক কাজ।
প্রথমত, আওয়ামী লীগ ৭ জানুয়ারির নির্বাচন করে ফেলেছে। এ ঘটনাকে দুইভাবে দেখা যায়। আওয়ামী লীগের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বিএনপি নির্বাচন আটকাতে পারেনি। ব্যর্থ হয়েছে।
আবার বিপরীত দিক থেকে দেখলে বিএনপি নির্বাচন হতে দেওয়ার মাধ্যমে সফল হয়েছে। কখনো কখনো প্রতিপক্ষকে খেলার জন্য মাঠ ছেড়ে দিয়েও জয় নিজের ঘরে আনা যায়।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন তেমনই খেলা। যে খেলায় অংশ না নিয়েও বিএনপি জিতেছে। বিপুলসংখ্যক ভোটার নির্বাচনে অংশ নেননি। ভোট দেননি। এমনকি আওয়ামী লীগের ভোটারদের বড় একটি অংশই ভোটকেন্দ্রে যাননি। দেশের ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন এক ঘটনা।
আশঙ্কা করা হয়েছিল, নির্বাচন ঘিরে বড় ধরনের সহিংসতা হতে পার দেশে। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপি নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য করতে পেরেছে। বিএনপির সফলতা হচ্ছে জেলজুলুম-নির্যাতনের পরও অত্যন্ত ধৈর্য ও দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করে সহিংসতা এড়াতে পেরেছে। বিএনপির প্রতি নানা ধরনের উসকানি ছিল। কিন্তু বিএনপি সেই ফাঁদে পা দেয়নি।
তবে নির্বাচনের পরই বিএনপি যেন অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলেছিল। এই অবস্থা থেকে বিএনপিকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখন বিএনপির কাজ হচ্ছে ৭ জানুয়ারির এই সফলতাকে সামনে নিয়ে যাওয়া। ভোট বর্জনের জনমতকে সামনের রাজনীতিতে ব্যবহার করতে হবে। উপজেলা নির্বাচনে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরবর্তী ধাপ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। দুই দিক দিয়েই উপজেলা নির্বাচনকে বিএনপি বিবেচনা করতে পারে। প্রথমত, নির্বাচনে অংশ নিলে তৃণমূলে নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হবে। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের বাইরে থাকার কারণে দলে যাঁরা জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক, তাঁরা নিজেদের তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। দমন-পীড়নের মুখেও নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতা তুলে ধরতে পারবেন। নির্বাচিত হয়ে এসে দলের পক্ষে প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড-প্রভাবিত করতে পারবেন। বিএনপির পক্ষে যে সুশাসন সম্ভব, তা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তুলে পারবেন। মোদ্দাকথা হচ্ছে, বিএনপির ব্র্যান্ডিং করতে পারবেন নতুন প্রজন্মের কাছে।